ঈদুল ফিতরের আগের চারদিনে প্রতিদিন গড়ে ঢাকা ছাড়বে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। কিন্তু সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথ মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৬ লাখ। ফলে আসন্ন ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ১৪ লাখ মানুষ পরিবহন সংকটে পড়বে বলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক জরিপে উঠে এসেছে। জরিপটি করেছেন দুর্ঘটনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, পরিবহন সংকটে পড়া মানুষকে ট্রেনের ছাদ, লঞ্চে ওভারলোড, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থায় যাতায়াত করতে হবে।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ২০১৮-১৯ সালের ঈদুল ফিতরে ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে বের হয়েছিল। করোনার সময় হওয়া ঈদগুলোয় ঢাকা থেকে ৬০ লাখের মতো মানুষ বের হয়েছে। গত চার ঈদে যেহেতু মানুষ ঢাকা ছেড়েছে তুলনামূলক কম, সেহেতু এবার আমরা ধারণা করছি ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ঈদের আগের চারদিনেই মূলত সিংহভাগ মানুষ ঢাকা ছাড়ে। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে বের হবে। কিন্তু যে পরিমাণ পরিবহন ব্যবস্থাপনা আছে, লঞ্চ, ট্রেন ও বাস এবং বিমান, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১৬ লাখ মানুষের ঢাকা থেকে বের হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। ১৪ লাখ মানুষের একটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ ১৪ লাখ মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঢাকা ছাড়তে হবে। এটা একটা গড় হিসাব। ঈদের আগের চারদিনের মধ্যে যেকোনো দিন এ সংখ্যাটি কম বা বেশি হতে পারে। যেদিন যাত্রীর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, সেদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আরো ভয়ানক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তিনি। অধ্যাপক হাদিউজ্জামান আরো বলেন, ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিন সড়কের দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। গতবার যাত্রী ছিল ৬০ লাখ। এবার কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ ঝুঁকি এড়ানোর একটি উপায় হলো গণপরিবহনগুলোয় সক্ষমতার চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি না করা। অতি মুনাফার লোভে কেউ যেন ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। ২০ রমজানের পর থেকেই যাদের সুযোগ আছে, পরিবারের সদস্যদের আগেভাগে পাঠিয়ে দেয়া হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে। ঈদ কিংবা উৎসবের সময় মানুষের যাতায়াত নিরাপদ করতে হলে বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই বলে মত দেন তিনি। এদিকে আসন্ন ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই এ মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সব পথের ফুটপাত ও রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কিছু অসাধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও যানজটমুক্ত করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বক্তব্য রাখেন। এ সময় যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।