শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

দুই বছর পর ঈদের আমেজ

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

আসন্ন ঈদ ঘিরে বাহারি পোশাকে সেজেছে রাজধানীর ফ্যাশন হাউসগুলো। রঙ-বেরঙের পোশাকে ভরে গেছে রাজধানীসহ সারাদেশের মার্কেটগুলো। করোনায় দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন দোকানিরা। ঈদ ঘনিয়ে আসায় গত দুই বছরের চেয়ে প্রত্যাশা বেড়েছে তাদের। ‘গত দুই বছর বেচাবিক্রি ছিল না। এবার আশা করছি ভালো বিক্রি হবে। ক্রেতারা আসতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে।’ জানালেন রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ নূরু। অন্য ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন, গত দুই বছরের ক্ষতি এবার তারা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। নানা সমস্যার মধ্যেও অনেকে ঈদের কেনাকাটা করছেন। বিশেষ করে যারা গত দুই বছর ঈদে সন্তানদের আবদার মেটাতে পারেননি, তারা এবার কমবেশি কেনাকাটা করছেন। ইফতারির পরই জমে উঠছে ঈদ বাজার। প্রতিদিনই কেনাকাটা করতে ঈদের মার্কেটে যাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর তালতলা সুপার মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, রামপুরা মার্কেট ও বাড্ডার মার্কেটগুলোতে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের সমাগম বেশি। প্রতি বছর রমজানের শেষ দিকে ক্রেতা বেশি দেখা গেলেও এবার শুরু থেকেই বিপণি বিতানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে বঙ্গবাজার, বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ বেশিরভাগ সুপার মার্কেট।
মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া কামাল বলেন, গত দুই বছর ঈদের কেনাকাটা করা সম্ভব ছিল না। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়েছে। কমবেশি যাই হোক ঈদের কেনাকাটা করতে হবে।
অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ঈদ-আনন্দের আমেজ নেই বললেই চলে। বিশেষ করে সা¤প্রতিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে কোনওমতো টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন তাদের অনেকে। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ঈদের কেনাকাটা নিয়ে কথা হয় রিকশাচালক আকতার হোসেনের সঙ্গে। ঈদকে সামনে রেখে কিছুটা বাড়তি আয়ের আশায় নওগাঁ থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি। আকতার বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব মানুষের ঈদ কীসের। ঈদ এই আছে এই নাই। তবে ইনকাম একটু বেশি হয়। তাই রিকশা চালাতে ঢাকায় এসেছি।’ রাজধানীর কয়েকটি বাসায় কাজ করেন সুফিয়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আবার ঈদের আমেজ-টামেজ কী। টানাটানির সংসার। ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পড়াতেই তো পারি না।’ সুফিয়া বলেন, এই বাজারে তার মতো শত শত গৃহশ্রমিকের সংসার চলছে টানাটানির মধ্য দিয়ে। তার মতে, গরিবের ঈদ মানে সামান্য কিছু বাড়তি আয়। সেটা দিয়ে সন্তানদের কিছু একটা কিনে দিলেই হলো। ঈদে বখশিসের আশায় আছেন রাজধানীর শত শত বাসার দারোয়ান, গৃহশ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরাও। রাজধানীর ছয় তলা একটি ভবনে দারোয়ানের চাকরি করেন নাজির হোসেন। তিনি জানালেন, ঈদ বোনাস ও জাকাত-ফিতরা পেলে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করতে পারবেন। তাছাড়া সম্ভব নয়। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজের জন্য রাজধানীর গোপীবাগে থাকেন মিনি। তিনি বলেন, ঈদে বোনাস ও ফিতরা পেলে মেয়ের জন্য জামা কিনতে মার্কেটে যাবেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, করোনা কমলেও বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এর নানা প্রভাব এখনও আছে। তিনি আরও বলেন, এর মধ্যেই পহেলা বৈশাখ ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা বেচাকেনার পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষরা বরাবরের মতো এবারও ঈদ-আনন্দ থেকে দূরে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুই বছর পর অন্তত কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এতে মানুষ আয় করতে পারছে। ব্যয় করার সক্ষমতাও বাড়ছে। এ কারণে এবার ঈদে আংশিকভাবে হলেও সবাই কম-বেশি ব্যয় করবেন। তবে সবার জন্য সুযোগটা সমান হবে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘খাবারের উচ্চমূল্য তাদের ঈদ আনন্দ মলিন করে দিচ্ছে। এটি কোনও স্বস্তির ঈদ নয়।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের দৃষ্টিতে গত দুই বছরের চেয়ে এবারের ঈদ সবার জন্যেই আনন্দের হবে। কারণ ধীরে ধীরে অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ কাজে ফিরছে। হয়তো করোনার আগের সময়কালে ফেরেনি। তবে গত দুই বছরের চেয়ে ভালো আছে। কেনাকাটা ও বাজার পরিস্থিতি দেখেই তা বোঝা যায়। হয়তো কষ্ট হচ্ছে, তবু সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করছেন সবাই।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদ আনন্দের ছোঁয়া দিতে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ব্যাংকগুলোরও দরিদ্রদের পাশে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com