রংপুরের গঙ্গাচড়ায় যৌতুকের জন্য মাথার চুল কেটে এক গৃহবধুকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধুর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তারসহ কেটে দেওয়া চুল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চর শংকরদহ গ্রামে। গৃহবধুর পিতা বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামের দরিদ্র মমিনুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম বেগম(২১) এর সাথে একই ইউনিয়নের চর শংকরদহ গ্রামের আমিনুর রহমানের পুত্র ইমান আলীর(৩০) পারিবারিক আলোচনা সাপেক্ষে আড়াই বছর আগে বিবাহ হয়। বিবাহের সময় মমিনুর রহমান মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাতা ইমান আলীকে ৮০ হাজার টাকা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার দেয়। বিবাহের কিছুদিন সংসার জীবন ভাল থাকলেও ইমান আলী অলস হওয়ায় পুনরায় স্ত্রীকে ২ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয় এবং গালিগালাজসহ নানা নির্যাতন করত। এর মধ্যে মরিয়মের কোল জুড়ে মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়, যার বর্তমান বয়স ৯ মাস। মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ায় অখুশি ইমান আলী ও তার মা-বাবা। বাড়ে যৌতুকের জন্য মরিয়মের ওপর চাপ ও নির্যাতন। বিষয়টি মরিয়ম তার পিতাকে জানায়। দরিদ্র পিতা ২ লক্ষ টাকা দিতে পারবেনা এবং মেয়ে স্বামীর সংসারে সুখে থাকতে পারে এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের মাধ্যমে বুজানোর চেষ্টা করে। এতে ইমান আলী আরো ক্ষীপ্ত হয়ে মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন প্রায় করতে থাকে। এ বছরের ১৯ মার্চ রাত ৮ টার দিকে মরিয়ম মাথায় তেল দেওয়ার জন্য শাশুড়ি রিনু বেগম তাকে কাছে ডেকে নেয়। মরিয়ম সরল মনে শাশুড়ির কাছে গেলে শাশুড়ি মাথার চুল ধরে কাচি দিয়ে ঘাড়ের ওপর পর্যন্ত কেটে দিয়ে বলে আর তোর মাথায় তেল দিতে হবেনা। এছাড়া বিষয়টি কাউকে না বলার বিভিন্ন রকম হুমকি দেয়। মরিয়ম চোখ লজ্জার ভয়ে বাড়ির বাহিরে বের হয়না। গত ৫ মে পুনরায় ২ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য মরিয়মকে চাপ দিয়ে স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর ইউনুস আলী ও শশুড় তাকে মার ডাং করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করিলে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় রক্ষা পায়। মার ডাংগে অসুস্থ্যতার কথা লোক মুখে পিতা মমিনুর শুনতে পাইয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্যদের নিয়ে পরের দিন তাদের বাড়িতে গেলে তাদেরকেও গালিগালাজ করে। উপায় না পেয়ে তারা মোবাইল ফোনে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসিকে জানায়। থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে মরিয়ম ও তার শিশু মেয়েকে উদ্ধার করে । পরে মা ও মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করায়। মমিনুর রহমান জানান, আমার মেয়ের সুখের জন্য বিয়ের সময় ৮০ হাজার টাকা ও স্বর্ণ দেই। এরপরও ২ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে নানা ভাবে নির্যাতন করে। আমি বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্যদের মাধ্যমে অনেক বার বুজানোর চেষ্টা করি। তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেন। গঙ্গাচড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পর নির্যাতিতা মরিয়ম ও শিশুকে উদ্ধার করি। মরিয়মের পিতা বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামীকে থানায় মামলা দায়ের করলে, মরিমের স্বামী ইমান আলী, শাশুড়ি রিনু বেগম গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আলামত হিসেবে কেটে দেওয়া উদ্ধার করা হয়। অপর আসামী ভাসুড় ইউনুছ আলী ও শশুড় আমিনুরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।