কক্সবাজার বেড়াতে এসে মেরিনড্রাইভ, ইনানী দেখতে যান না এমন পর্যটক খুব কমই আছেন। ইনানী সৈকতের অদূরে তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিপের দক্ষিণ পাশে রয়েছে পাথুরে সৈকত পাটোয়ারটেক। এ সৈকতটি দেখতে অনেকটা বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের মতো। ফলে খুব সহজেই এ সৈকতটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ফলে দিনদিন শত শত পর্যটক এখন ঘুরতে আসছেন পাটোয়ারটেক সৈকতে।
কক্সবাজার-টেকনাফ উপকূলী এলাকার ঠিক মধ্যভাগে মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন পাটায়ারটেক সমুদ্র সৈকত। এটি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নে অবস্থিত। এ সৈকতের পশ্চিমে সমুদ্র, পূর্বে রয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়। এই দুইয়ের মাঝখানে সরু মেরিনড্রাইভ। মেরিনড্রাইভের পাশে পানের বরজ, সুপারি বাগান ও নানান জাতের সবজির ক্ষেতের সৌন্দর্য পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। সাগর-পাহাড় আর মেরিনড্রাইভের গভীর মিতালীতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হারিয়ে যান অন্য ভুবনে। গতকাল বুধবার (১১ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার প্রধান সমুদ্র সৈকতের মতো পাটোয়ারটেক সৈকতে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক। তাদের অনেকেই সমুদ্রের নীল পানিতে সাঁতার কেটে এবং ছবি তুলে সময় কাটাচ্ছেন। ইনানী সৈকতের মতো এখানকার পানিতেও রয়েছে পাথর। সেই পাথরে ধাক্কা দিয়ে ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। আর সেই সৌন্দর্যে মেতেছেন পর্যটকরা।
বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় গত ১ এপ্রিল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। জাহাজ চলাচল শুরু হবে আগামী নভেম্বরে। সেন্টমার্টিন যেতে না পারায় পাটোয়ারটেক সৈকতে গিয়ে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য, আমেজ ও সাধ খুঁজে বেড়াচ্ছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
জয়পুরহাট থেকে সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে আসা মিয়া সামিদ বলেন, ‘প্রতিবছর পারিবারিক ভ্রমণে কক্সবাজার আসলেও এই জায়গায় নতুন এলাম। কক্সবাজার শহরে দুদিন থাকার পর ভ্রমণের শেষদিন এখানে এসেছি। শুনেছি এই সৈকত দেখতে সেন্টমার্টিনের মতো। পানি আর পাথর দেখে মনে হয় যেন, এটি সেন্টমার্টিন। এছাড়া সৈকতের পাশে মেরিনড্রাইভ আর পাহাড় হওয়ায় এই জায়গাটি সৌন্দর্য যে কারো মন কেড়ে নেবে।’ বগুড়া থেকে আসা ফয়সাল মিঞা ও রেবেকা সুলতানা দম্পতি বলেন, ‘লোকের মুখে শুনে সেন্টমার্টিনের সাধ নিতে এলাম পাটোয়ারটেক। এখানকার পাথরগুলো খুব সুন্দর। মেরিনড্রাইভ দেখে এখানে এসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সাধটা নিলাম। ভালো লাগছে।’ এদিকে সৈকত সংলগ্ন খাবারের হোটেলগুলোতে তিনগুণের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনুমোদিত মূল্য তালিকার বাইরে যে সব হোটেল বা রেস্টুরেন্ট অতিরিক্ত খাবারের দাম রাখছে তাদের ব্যাপারে আমরা খবর নিচ্ছি। অতিরিক্ত দাম রেখে পর্যটক হয়রানির প্রমাণ পাওয়া গেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে পর্যটকের সঙ্গে এখানে বাড়ছে দোকানপাটের সংখ্যাও। পাটোয়ারটেক সৈকতের আশেপাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জায়গা-জমি কিনে দেওয়াল দিয়ে ঘিরে রাখায় এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। দোকানের বর্জ্য- প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, ময়লা-আবর্জনাও সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘পাটোয়ারটেক সৈকতে দিন দিন পর্যটক বাড়ছে। তবে পর্যটক বাড়ায় সেখানে প্রতিযোগিতামূলক যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে তুলা হচ্ছে। সেই দোকানগুলোর বর্জ্য সৈকতে ফেলা হচ্ছে যা সাগরের পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা অপচনশীল প্লাস্টিকের বর্জ্য, যেমন মিনারেল ওয়াটারের বোতল, চিপসের প্যাকেট, কোমল পানীয়র ক্যান-বোতল, সিগারেটের ফিল্টার, পলিথিন ফেলছেন সৈকতে। সেখানে ময়লা–আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সন্ধ্যার পর থেকে রেস্টুরেন্টের সামনে করা আলোকসজ্জা এবং সৈকত আলোকিত থাকায় ডিম পাড়তে পারছে না গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে আসা মা কচ্ছপ। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।’