অবশেষে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের চক্কামাল এলাকায় নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি টাকা নয়ছয় করে যুবলীগ নেতার ব্যক্তিস্বার্থে তার বাড়িতে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা সেই ইটসোলিং সড়কের ইট বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে দুলালের বাড়ি থেকে বাবলুর বাড়ির সড়কে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। চলতি অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এমন অভিনব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দৃশ্য দেখে এলাকাবাসি হতবাক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে অনিয়ম-দুর্নীতির নয়া কৌশল হিসেবেই দেখছেন সচেতন মহল। প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা সরকারি কোষাগারের লক্ষাধিক টাকা পানিতে ফেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও উন্নয়ন প্রকল্প বাছাই কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকৌশলীসহ জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন চক্কামাল এলাকার বাসিন্দারা। এ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হয়। জেলাজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। সরকারি টাকা দিয়ে একটি বাড়ির জন্য রাস্তা নির্মাণে স্থানীয়দের মধ্যে নিন্দার ঝড় উঠলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২৫ এপ্রিল বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্পটি সংশোধনের নির্দেশ দেন। এর তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওই প্রকল্প সংশোধনে দৃশ্যমান কোনোই পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ। তার রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গরিমশির অভিযোগ করেন এলাকাবাসি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দলীর প্রভাব খাটিয়ে সরকারি অর্থ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করিয়ে নেয়া ওই নেতার নাম রোকুনুজ্জামান সোহেল। তিনি উত্তরগ্রাম চক্কামাল গ্রামের পূর্বপাড়ার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। নিজেকে উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন। এলাকায় রয়েছে তার দাপট। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ঘনিষ্ঠজন দাবি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৫-২০ জন ক্ষমতাশীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ওই যুবলীগ নেতার কর্মকান্ডে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা। দলীর প্রভাব খাটিয়ে সরকারি অর্থ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করিয়ে নেয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি যুবলীগ নেতা রোকুনুজ্জামান সোহেল। তিনি প্রতিবেদককে উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করার পরমর্শ দেন। উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ জানান, চলতি মাসে উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মিটিংএ সিদ্ধান্ত গৃহিত হলে তিনি ওই রাস্তার ইট চক্কামাল জামে মসজিদ ও চারটি পাড়ার বাসিন্দাদের চলাচলের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে স্থানান্তর করবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যক্তিস্বার্থে প্রকল্প বাস্তবায়নের সত্যতা পেয়ে প্রকৌশলীকে তা সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি এই সরকারি কর্মকর্তা। নওগাঁর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক উত্তম কুমার রায় জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।