নুরবক্ত মিয়া(৬৫ ) নিজের কোন জমি জমা ছিল না, বাড়ি বলতে ছিলো রেললাইনের পাশে একটি ঝুঁপড়ি ঘর। কখনো কল্পনা করেননি তাঁর নিজের জমি হবে, পাকা বাড়ি হবে। কেমন আছেন জানতে চাইলে নুরবক্ত হাউমাউ করে কেঁদে বললেন, ‘জীবনে স্বপ্নেও ভাবি নাই আমি ঘরের মালিক হমু, জায়গার মালিক হমু, খাই বা না খাই নিজের ঘরে শান্তিতে ঘুমামু, এসব আমাদের মতো গরীবের কাছে ছিল দু:স্বপ্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নতুন ঘরের মালিক হইছি, দুই শতক জায়গার মালিক হইছি শান্তিতে বসবাস করছি স্বপ্নের মতো মনে হয়।’ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সুকানদিঘী আশ্রয়ন প্রকল্পে জায়গা ও ঘর পেয়ে এমনটিই বলছিলেন নুরবক্ত। একই মুজিব নিবাসের ঘর পেয়েছেন আব্দুর রহমান(৫৫) তাঁর দুই হাত নাই, কোন কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন অন্যের জমিতে ঝুঁপড়ি করে বউ ও সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্ট করে ছিলেন। তার সংসার চলে ভিক্ষা করে। একই ভাবে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়ার ভিক্ষুক নবিরন বেগম(৮৫), প্রতিবন্ধী শাহিনুর কাল(৬১) কাকিনা ইউনিয়নের জেলে পড়ার দরিদ্র জেলে মজিবর রহমান(৭৮) সহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ৬২৫ গৃহহীন পরিবার পেয়েছে জমিসহ পাকা ঘর। তাঁরা এখন ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট না পেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারে। গৃহ ও জমি পাওয়া নুরবক্ত মিয়া বলেন, জীবনে কখনো সপ্নেও দেখিনি জমি হবে বাড়ি হবে। ফ্যানের পাখার নিজে ঘুমাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মতো অনেকেই জমি ও বাড়ি দিয়েছেন। এখন দুমুঠো ডাল ভাত খেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জমি ও ঘর পাওয়া এ সব পরিবারের আগ্রহী সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় ও উপজেলা কৃষি অফিস। এছাড়া এসব পরিবার গুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, নলকূপ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার আট ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ১৫০ টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৫০টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ২২৫টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব ঘর নির্মাণে সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪০০ টি ঘর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে নির্মাণ করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০০ টি গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তর করে পুনর্বাসন করা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য তৃতীয় পর্যায়ে ২২৫ টি ঘর নির্মাণ করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী এসব ঘর উদ্বোধন করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি ঘরের জন্য দুই শতাংশ খাসজমির বন্দোবস্তসহ দুই কক্ষের সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরের প্রতিটিতে একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল মান্নান বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে আশ্রয়া পাওয়াদের অধিকাংশই রেললাইনের পাশে বা কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।