শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মাধবদীতে লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের বৃষ্টি প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন বরিশালের মুসল্লিরা আদিতমারীতে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা নওগাঁয় বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন ছড়ার পানিই ভরসা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চকরিয়ায় একাধিক অভিযানেও অপ্রতিরোধ্য বালুখেকো সিন্ডিকেট রবি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ৮৮ হাজার ১১০ মেট্রিকটন ভূট্টা উৎপাদনের প্রত্যাশা কটিয়াদীতে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ, বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসস্তিকা বরিশালে দাপদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে শেবাচিম হাসপাতালে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু কালীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে বিলাস পণ্য কম কেনার আহ্বান

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২১ মে, ২০২২

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় ক্রেতাদের দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বিলাস পণ্য কম কেনা ও অতিরিক্ত পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকার অনুরাধ জানান সংস্থাটির পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। গতকাল শনিবার (২১ মে) অধিদপ্তরের পরিচালকের নেতৃত্বে কারওয়ান বাজারে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, জরিমানা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে শুদ্ধতা আনা। আমরা তাদের বারবার সচেতন করবো। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় বারবার করলে তাদের সংশোধনের উদ্যোগ নেবো। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের বারবার বলছি, পাকা রশিদ দিতে হবে। মূল্যতালিকা ঝোলাতে হবে। পেঁয়াজের যারা বড় পাইকার তারা আজকে পাকা রশিদ দিচ্ছে না। এটা না দিলে কারসাজি করার সুযোগ থাকে। একদিনে দুই-তিন টাকা দাম বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য আমরা জরিমানা করেছি।
‘অনেক ভোক্তা প্যানিক বায়িং করেন। ব্যবসায়ীরা বললেন, একজন ভোক্তা ৫ লিটারের ৪ টা বোতল নিয়ে গেছেন। এটি যেন না হয়। আমাদের পরিমিতি বোধ বজায় রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আমদানি করা বিলাস পণ্য কম কেনার অনুরোধ জানাই।’
শাহরিয়ার বলেন, যেসব ফল আমদানি করতে হয় সেগুলো কম খেয়ে একটু দেশি ফল বেশি খেতে পারি। আম, কাঁঠাল, লিচু আছে। আমরা আমাদের আচরণের মাধ্যমে সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পারি। এজন্য ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমরা শুরু করি। সারাদেশে ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের পর সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এরই আলোকে আমরা দেখছি গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী এটার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। রোজার আগে থেকে আমরা কাজ করছি। এখন বলতে পারি তেলের বাজার এখন স্থিতিশীল আছে। আটা থেকে শুরু করে যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় সেগুলোর দাম বেড়েছে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম বাড়তি দেখছি। এবার বাংলাদেশে পেঁয়াজের ফলন অনেক বেড়েছে। কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
বিলাসী পণ্য আমদানি কমাতে নতুন শর্ত: আমদানি ব্যয়ের চাপে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়ছে। ডলারের দামও লাগামহীন। এমন পরিস্থিতিতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে গাড়ি ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ সংরক্ষণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য এলসির ক্ষেত্রে মার্জিন হার ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। তবে শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানির ঋণপত্র এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে। ১০ মে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে। আগে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মার্জিনের হার নির্ধারণের নির্দেশনা ছিল। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আমদানির চাপ বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত আমদানি চাপ কমাতে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল জরুরি পণ্য ছাড়া বিলাসী পণ্য আমদানিতে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তাতেও আমদানি চাপ কমাতে না পারায় নতুন নির্দেশনা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোটর কার (সেডান কার, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল ইত্যাদি), হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এতে আরো বলা হয়েছে, শিশুখাদ্য, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য এবং সরকারি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এ নির্দেশনা জারির প্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিলের নির্দেশনা রহিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। এদিকে আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চাহিদা বেড়েছে ডলারের। ফলে লাগামহীন বাড়ছে ডলারের দাম। মান হারাচ্ছে দেশীয় মুদ্রা টাকার। এক দিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২৫ পয়সা। গত ১৪ দিনে দুই দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ৫০ পয়সা। সবশেষ ১০ মে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হয় ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। এক দিন আগে ৯ মে সোমবারও এক ডলারে লেগেছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। আর গত ২৭ এপ্রিল ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কের্টে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৩ টাকায়।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৩ দশমকি ৮৬ শতাংশ। আলোচিত ৯ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন,‘বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর মেগা প্রকল্পের সুদ-আসল পরিশোধ করতে গিয়ে আমরা কি শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থানের যাচ্ছি কি না এ নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতির বর্তমান সূচকগুলোর বিচারে অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের শঙ্কা আছে বলে মনে হয় না। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা এত দিন আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেও দেখা যেত, শ্রীলঙ্কা সেদিক থেকে একটি ব্যতিক্রম।
তবে দেনা পরিশোধে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ঠেকানোই মেগা প্রকল্পের সাফল্য মূল্যায়নের মাপকাঠি অবশ্যই হতে পারে না। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যয়ের সাশ্রয়, সম্পদের অপচয় রোধ এবং প্রকল্পের সঠিক অগ্রাধিকার নির্ণয়। এ ধরনের ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্প গ্রহণ নিছক জনতুষ্টির বিষয় হতে পারে না, বরং এগুলো সত্যিকারের সফলতা নির্ভর করবেÍএর ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কতখানি আকৃষ্ট করা গেল, তার ওপর। বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর আর চাপ পড়বে না। ২০০৮ সালর বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বাড়ার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় টানাপোড়েনে পড়েছিল। প্রায় দেড় দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরে অর্থনীতি এখন আবার একটা অস্থিরতার দিকে পড়তে যাচ্ছে। এটাও মূলত বিশ্ব অর্থনীতির কারণেই। তবে অর্থনীতিতে এ ধরনের ঝাঁকুনি খেলেই হয়তো টেকসই প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে কাঠামোগত মৌলিক প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেদিকে নজর পড়ে। যেমন আগামী দিনে আমাদের উন্নয়ন ব্যয়ে অনেক সাশ্রয়ী হতে হবে এবং রাজস্ব সংগ্রহ অবশ্যই জোরদার করতে হবে। কারণ, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, জনস্বার্থ রক্ষা ও প্রযুক্তিগত উন্নতি এসবের জন্যই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের খরচ ক্রমেই বেড়ে যাবে। মনে রাখা দরকার, উন্নয়নশীল বিশ্বে মধ্যমেয়াদে, বিশেষ করে এক দশক সময়ের জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের অনেক নজির আছে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া পেরেছিলÍতার উদাহরণ খুবই বিরল। সে কারণেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ–পরবর্তীকালে সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র বা অঞ্চল বাদ দিলে দক্ষিণ কোরিয়াই শুধু নিম্ন আয়ের দেশ থেকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হওয়ার এখন পর্যন্ত একমাত্র দৃষ্টান্ত। সুতরাং এসব বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com