শেরপুর সদর উপজেলার সাতটি গ্রামে গড়ে উঠেছে কাঠের তৈরির আসবাবপত্রের প্রায় ৩০০ কারখানা। এসব কারখানার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ। বর্তমানে এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে বক্স খাট, সেমি বক্স খাট, সাধারণ খাট, সোফা সেট, ডাইনিং ও ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, ওয়ারড্রোব, ফাইল ক্যাবিনেট, ওয়াল সেট, সিঁড়িসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনাসামগ্রীসহ ছোট বড় নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঠের আসবাবপত্র। চমৎকার কারুকাজ ও নিত্যনতুন ডিজাইন থাকায় বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে শেরপুরের এসব আসবাবপত্রের কদর বাড়ছে। এ খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এখানকার আসবাব বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। জানা গেছে, গত দুই দশক আগে শেরপুর সদর উপজেলার শেরীপাড়া, পূর্বশেরী, পশ্চিমশেরী, অষ্টমীতলা, মধ্যবয়ড়া, বয়ড়াপরানপুর ও কুসুমহাটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গড়ে তোলেন আসবাব তৈরির ৮ থেকে ১০টি কারখানা। তবে ২০০৭ সালের পর থেকে এ চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। বর্তমানে এসব এলাকায় রয়েছে আসবাবাপত্র তৈরির প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টি কারখানা। এসব কারখানার কাঠ জোগান দেওয়ার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টি স মিল। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আসবাব তৈরির কারখানাগুলোয় বিভিন্ন ধরনের আসবাব তৈরি করছেন শ্রমিকেরা। কেউবা করাত দিয়ে কাঠ চেরাই করছেন, কেউবা হাতুড়ি-বাটালি দিয়ে কাঠের ওপর খোদাই করে নকশা করছেন, আবার কেউ আসবাবপত্রে বার্নিশ দিচ্ছেন। এরপর প্রস্তুত আসবাবপত্রগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয় নিজ নিজ বিক্রয়কেন্দ্রে । শেরপুরের কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের মান ভালো হওয়ায় চাহিদা আছে বেশ। বর্তমানে ফুল বক্স খাট ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়, সেমিবক্স খাট ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায়, লতা খাট ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায়, বিভিন্ন ধরনের সোফা সেট ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়, ওয়ারড্রোব ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায়, ডাইনিং টেবিল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়, ড্রেসিং টেবিল ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় এবং আলনা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঠমিস্ত্রি সাত্তার মিয়া বলেন, আমরা কাঠমিস্ত্রিরা দিন হাজিরা কাজ করলে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি নেই। অন্যদিকে যদি কোন জরুরী অর্ডার থাকে সেক্ষেত্রে আমরা জন প্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ থেকে টাকা মজুরি নেই। তবে আমরা সত্যিকার অর্থে কাজের তুলনায় সঠিক মজুরি পাই না। যদি কাজের বিনিময়ে সঠিক মজুরি পেতাম। তাহলে পরিবার নিয়ে, ভাল মন্দ খেয়ে পরে জীবন যাপন করতে পারতাম। নকশাঁ মিস্ত্রি আনিস মিয়া জানান, কাঠের উপরে নকশাঁ ফুটিয়ে তোলাটা কঠিন কাজ। অনেক সময় দীর্ঘক্ষন বসে থাকলে আমাদের কোমরে সমস্যা হয়। তবুও কাজ করতে হয়। কারন টাকা আয় না করলে সংসার চালাবো ক্যামনে। কাঠের নকশাঁ করতে আমরা দিনপ্রতি ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা নেই। অনেক সময় যুক্তি ভিত্তিক কাজ করি। সেক্ষেত্রে আমরা ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা করে মজুরি নেই। আল আকসা ফার্নিচার মার্টের স্বত্তাধীকারি আজমল বলেন, বলেন, আমরা জেলার ভারত সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় থেকে কাঠগাছ কিনে আনি। তারপর গাছগুলো গাড়ি বোঝায় করে জেলা সদরে আনি। এরপর যার যার পছন্দমত স’মিলে নিয়ে গাছগুলো চিড়ে কাঠ বের করি। তারপর কাঠমিস্ত্রি ও নকশা করিগররা তাদের সুনিপুণ হাতে গড়ে তোলেন সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র।বর্তমানে এখানকার আসবাব ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। সাঈদ ফার্নিচার মার্টের স্বত্তাধীকারি চানু মিয়া জানান, একসময় শেরপুর সদর উপজেলায় মাত্র কয়েকটি আসবাবপত্র বিক্রির দোকান ছিল। কালের পরিবর্তনে এখন জেলা সদরের আশপাশে শতশত দোকান। আমরা প্রতিজন ব্যবসায়ী দক্ষ কারিগর দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের আসবাবাপত্র তৈরি করে থাকি। আমরা প্রায় সবধরনের কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে থাকি। যা গৃহস্থালিতে নিত্যপ্রয়োজনীয়। এবিষয়ে শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, সরকারি কোন সহযোগীতা ছাড়াই কয়েক শত পরিবারের হাজার খানেক মানুষ অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাই এ শিল্পের উন্নয়নে সহজ শর্তে ও কম সুদে সরকারিভাবে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করলে আরও বেশিসংখ্যক উদ্যোক্তা এ শিল্পে যুক্ত হবেন। পাশাপাশি বেকার তরুনদের কর্মসংস্থানের এক নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।