আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট পেশ
একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ (বাজেট) অধিবেশন শুরু হবে আগামী ৫ জুন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আজ বুধবার এই অধিবেশন আহ্বান করেন। ১৮ মে বুধবার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়ে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৫ জুন (রোববার) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সংসদ কক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। তিনি সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন
এ অধিবেশনে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ বাজেট তার জন্য চতুর্থ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ১৪তম বাজেট। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে নতুন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এবার দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরি করছে সরকার। তবে মহামারি ও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে নতুন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হচ্ছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা— জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই হিসেবে নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকার কম-বেশি। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রশ্ন হচ্ছে— সরকার বাজেটের এই ঘাটতি মেটাবে কীভাবে? অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশের অভ্যন্তর থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা এবং বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরের উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ৯৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। বাকিটা আসবে সঞ্চয়পত্র থেকে। সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। পক্ষান্তরে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ)। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের হার কমানো হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে সরকারের জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেটের আকার ২ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি থাকবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এ অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রাক্কলন হয়েছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ সভা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় নতুন অর্থবছরের খসড়া বাজেট অনুমোদন হবে। সংবিধান মতে একই দিন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ নতুন বছরের খসড়া বাজেট সম্বলিত অর্থবিলে সম্মতি দেবেন। তিনি সেদিন জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির দফতরে অফিস করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে গত দুই অর্থবছর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও এবার বাড়াতে হচ্ছে। ভর্তুকির এ অর্থ যোগাতে এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বর্হিভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি টাকা ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রণীত হবে আগামী বাজেট। এতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধিও বাড়বে।