এক চুলা ৯৯০, দুই চুলা ১০৮০
আবাসিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের মাসিক বিল দুই চুলার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৮০ টাকা ও এক চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি। জুলাই মাস থেকেই এ দাম কার্যকর করা হবে।
গতকাল রোববার (৫ জুন) বিকেল ৩টায় বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবু ফারুক এ দাম ঘোষণা করেন। এর আগে গত ২১ মার্চ রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ানোর বিপরীতে গণশুনানি করে বিইআরসি। ওই শুনানিতে গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ, অর্থাৎ এক চুলা ৯২৫ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব করার বিপরীতে দুই চুলা ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার ট্যারিফ ৯২৫ থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করে বিইআরসি।
গ্যাসের বাড়তি দামে জনদুর্ভোগ বাড়বে: বিষয়টিতে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা পরও গ্যাসের দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম বাড়ানো। বিইআরসি বলছে, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও বিদ্যুতসহ সব খাতে গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই নতুন দাম ঘোষণা করা হলো। করোনার চলমান সমস্যার মাঝে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাবে এমনিতেই বাজারের সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এরমধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্বে অর্থনীতির এখন যে সংকট, তা বাংলাদেশের একার নয়। প্রায় এক দশক ধরে দেশে মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে একধরনের স্বস্তি ছিল। কিন্তু এখন সেটি নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। সরকারি হিসাবে যতটুকু মূল্যস্ফীতি বলা হচ্ছে, মানুষকে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যস্ফীতির ভার নিতে হচ্ছে। প্রায় সব দেশই এ সংকট নিজেদের মতো করে সমাধানের পথ খুঁজছে। নিত্য পণ্যের পাশাপাশি জ্বালানির দাম বাড়াতে তার সার্বিক প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়তে শুরু করেছে জনগণের উপরে। মূল্যস্ফীতি ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার দুর্ভোগ কিংবা শিল্পের উৎপাদন কমে যাওয়া কোন কিছুই বিবেচনায় না নিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের দাবি, ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর কাঠামোতে পরিবর্তন, সিস্টেম লস আর দুর্নীতি কমালে ভর্তুকি সমন্বয় সম্ভব। কিন্তু সেপথে না হেঁটে সরাসরি গ্যাসের দাম বাড়ানোতে শঙ্কিত সাধারণ মানুষও। প্রবাসী আয় আর আমদানি-রপ্তানির উপর নির্ভরশীল দেশের অর্থনীতি। জ্বালানির দাম বাড়ানোতে প্রবাসী আয়তে হয়তো কোনো প্রভাব পড়বে না, কিন্তু উৎপাদনমুখী শিল্পে এর প্রভাব সরাসরি পড়বে। যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে যথেষ্ট সোচ্চার। আমাদের আশাবাদ, সরকার এ বিষয়গুলো সার্বিকভাবে বিবেচনা করবে এবং কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হবে।
১২ কেজির এলপি গ্যাসের দাম কমলো ৯৩ টাকা: ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির প্রতিটি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৯৩ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) বিকেলে এ ঘোষণা দেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকেই এ দাম কার্যকর হবে। ফলে দাম কমে প্রতি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ২৪২ টাকা। এর আগে তা ছিল ১ হাজার ৩৩৫ টাকা।
দাম ঘোষণার সময় বিইআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে (ভোক্তা পর্যায়ে) মূসক ব্যতীত মূল্য প্রতি কেজি ৯৭ টাকা ৩ পয়সা এবং মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১০৩ টাকা ৫০ পয়সায় সমন্বয় করা হয়েছে। সে অনুযায়ী রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির মূসকসহ মূল্য ১ হাজার ২৪২ টাকায় সমন্বয় করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বুধবার রাতে সৌদি আরামকো কোম্পানি তাদের দাম ঘোষণা করেছে। আমরা সারা রাত সদস্যরা বসে দাম সমন্বয় করেছি।’
উল্লেখ্য, চলতি বছর জানুয়ারি মাসের জন্য ৫০ টাকা কমিয়ে এলপিজির দাম ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসে ৬২ টাকা দাম বাড়ানো হয়। মার্চ মাসে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এপ্রিল মাসে আরো ৪৮ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৩৯ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। মে মাসে তা ১০৪ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৩৩৫ টাকা করা হয়।