সিরাজগঞ্জ জেলার শস্যভান্ডারখ্যাত তাড়াশ উপজেলাতে কৃষি শ্রমিকের চরম সংকট ও বিরূপ আবহাওয়ার দরুণ অধিকাংশ কৃষক খেতের পাকা বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেননি। ফলে এবছর চাল কিনে ভাত খেতে হবে তাদের। পক্ষান্তরে অর্ধেক ধানের চুক্তিতে ধান কেটে অধিক লাভবান হয়েছেন কৃষি শ্রমিকেরা। ফলে তারা সারা বছর ঘরের চালের ভাত খাবেন। সরজমিনে দেখা যায়, কাজিপুর থেকে বোয়ালিয়া গ্রামীণ সড়কের পাশের একটি বোরো খেতে দুই জন কৃষককে ধান কাটতে। ঐ খেতের মালিক বারুহাস ইউনিয়নের কাজিপুর গ্রামের শাহাদত হোসেন বলেন, আমি ৫ বিঘা খেতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে ২ বিঘা খেতের দাবি ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমানে ধানগুলো মানুষজনের গরু ও হাঁসের খাবার। ৩ বিঘা ভগ্নিপতির সাথে কাটার চেষ্টা করছি। একই গ্রামের পাশা নামের আরেক জন কৃষক বলেন, তিনি ১৫ বিঘা খেতে বোরো ধান আবাদ করে ৮ বিঘা কাটতে পেরেছেন। ৭ বিঘা খেতের ধান কাটা যায়নি। কৃষি শ্রমিক না পেয়ে ধান খেতের দাবি ছেড়েছেন বলভা গ্রামের মনিরুল ইসলাম ২ বিঘা, আবুল হোসেন ৩ বিঘা, আব্দুল মতিন ৪ বিঘা ও আলমাহমুদ ৪ বিঘা। শিবপুর গ্রামের গোলবার হোসেন নামে এক জন কৃষক দুই স্কিমে ২৫ বিঘা খেতে বোরো ধানের আবাদ করে ১ স্কিমের ১০ বিঘার দাবি ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষকদের অনুরূপ করুণ দশার চিত্র পুরো উপজেলাতে। কৃষকদের বক্তব্য থেকে আরো জানা যায়, ধান কাটার শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। খেতের পাকা ধান বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাশে নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর নতুন চাড়া গজিয়ে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব খেতের ধান একটু ভালো ছিল অর্ধেক ধান কৃষি শ্রমিকদের দিয়ে কেটে নিতে হয়েছে। তারা যেটুকো ধান ঘরে তুলেছেন টেনেটুনে ৬ মাস যেতে পারে। বাকি ৬ মাস কেনা চালের ভাত খেতে হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুননাহার লুনা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ২২ হাজার ৩৬০ হেক্টর খেতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ১৮ হাজার হেক্টর খেতের ধান কাটতে পেড়েছেন কৃষকেরা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। তাদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হবে। বিশেষ করে কৃষকদের বিশেষ অনুদান দেওয়ার চেষ্টা চলছে।