হজ ইসলামের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং ঈমানের পর মুসলমানদের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ। সামর্থ্যবানদের জন্য এটি ফরজ হলেও এই হজ পালনের আগ্রহ পোষণ করে সামর্থ্যহীন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও। ইসলামে আছে এর অনেক ফজিলত। একবার আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কী? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কী? বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কী? বললেন, মাবরুর হজ (কবুল হজ)। (বুখারি, হাদিস : ১৫১৯) অন্য হাদিসে এসেছে, যে আল্লাহর জন্য হজ করে এবং তাতে অশালীনতা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকে, সে হজ থেকে নবজাতক শিশুর মতো (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে। (বুখারি, হাদিস : ১৫২১) গুরুত্বপূর্ণ এই বিধানের মাধ্যমে ইসালে সওয়াব করা এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সহিহ বর্ণনায় এসেছে, বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক নারী এসে জিজ্ঞেস করল, …আমার মা হজ না করে ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বলেন, (হ্যাঁ), তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো। (তিরমিজি, হাদিস : ৯২৯) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জুহায়না গোত্রের এক মহিলা এসে নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, আমার মা হজের মানত করেছিলেন, কিন্তু তা পূরণ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ করো। আচ্ছা, তোমার মার ওপর ঋণ থাকলে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো। তাঁর ঋণই অধিকতর পরিশোধযোগ্য। (বুখারি, হাদিস : ১৮৫২)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এক ব্যক্তিকে ‘শুবরুমার পক্ষ থেকে লাব্বাইক’ বলতে শুনে জিজ্ঞেস করলেন, শুবরুমা কে? বলল, আমার এক ভাই। অথবা বলেছে, আমার এক নিকটাত্মীয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি হজ করেছ? বলল, জি না। বললেন, আগে তুমি হজ করো তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৮১১) এ প্রসঙ্গে ইমাম নববি (রহ.) লেখেন, ‘হজ, দোয়া ও সদকার সওয়াব সর্বসম্মতিক্রমে মৃত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে। ’ (শরহু সহিহ মুসলিম : ১/৯০) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু মতভেদ ছাড়া অধিকাংশ ইমামের মতে হজ মাইয়িতের জন্য যথেষ্ট হবে। ’ (মাজমুউল ফাতাওয়া : ২৪/৩১০)
সুতরাং হজের মাধ্যমে ইসালে সওয়াব করা যায়, এটা ইমামদের সর্বসম্মত মত। এখানে দ্বিমত করা বা বিতর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। হজের মতো ওমরাহও ইসালে সওয়াবের প্রমাণিত এক অনন্য পদ্ধতি। এটি খুবই ফজিলতপূর্ণ আমল। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর একত্রে আদায় করো। এ দুটো দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
আবু রাজিন উকায়লি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা খুবই বৃদ্ধ। তিনি হজ, ওমরাহ এমনকি সফর করতেও সক্ষম নন। নবীজি বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ করো। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৩০) এ প্রসঙ্গে আরবের বিখ্যাত আলেম শায়েখ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল-উসায়মিন (রহ.) বলেন, ‘মৃতের পক্ষ থেকে হজের মতো ওমরাহ করাও জায়েজ। ’ (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম : পৃ. ৫০৬) সুতরাং অক্ষম ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে ওমরাহ করা যেমন জায়েজ, তেমনি নিজে ওমরাহ করে মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোও বৈধ।