মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তোফায়েল আহমেদ বিনা ভোটে এমপি হয়ে পারিবারিক ভাবে লুঠপাট করেছে-হাফিজ ইব্রাহিম শ্রেষ্ঠ গাইড হিসেবে পুরস্কার পেলেন মাইলস্টোন কলেজের ছাত্রী মেহজাদ আকবর এসবিএসি ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত দৌলতখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু

স্পেনে যাওয়ার স্বপ্ন অধরাই রইল ধনবাড়ীর চা বিক্রেতার ফুটবল কন্যার

জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাংঙ্গাইল :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

মেয়ে মাইনসের কিসের ফুটবল খেলা। তাও আবার ছোট প্যান্ট আর গেন্জি পরে। লাজ লজ্জা সব উঠে গেল নাকি এই কটু কথা কে উপেক্ষা করে, ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁকে ছিল নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া রোকসানার(১৪)। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ফুটবল খেলে দরিদ্র বাবা-মায়ের অভাব ঘুচানোর। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে কাটিয়ে দেশের জন্য ফুটবল খেলছেন রোকসানা। গত বছর ঢাকায় বাফুফের মাঠে ৩০০ জনের মধ্যে রোকসানাসহ আরো দুইজন ছেলে স্পেনে ফুটবল খেলতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে স্পেনে যাওয়া হয়নি তার। অধরাই রয়ে যায় রোকসানার স্বপ্ন। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পানকাতা গ্রামের প্রতিবন্ধি চা বিক্রেতা বাবা রফিকুল ইসলামের মেয়ে রোকসানা আক্তার। রোকসানাদের মত প্রত্যন্ত নারী ফুটবল খেলোয়ারদের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতা না পাওয়ার আক্ষেপ করেছেন ক্রীড়া সংগঠকরা। প্রত্যন্ত গ্রাম পানকাতা। সেই গ্রামে রোকসানার নিজস্ব জমি থাকলেও রয়েছে ভাঙা একটি টিনের ঘর। যার এক কক্ষে থাকেন ভাইবোনসহ বাবা ও মা। পাশের রুমেই থাকে রোকসানা। ঘরের দরজা-জানালাও নেই। বৃষ্টি হলেই টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে ভিজে যায়। তার বাবা রফিকুল ইসলাম বাড়ির পাশের রাস্তার ধারে চা বিক্রি করছেন। তার মা রুপা বেগমও চা-স্টলে বসে চা বানায়। সব্বোর্চ গোলদাতা ট্রফি, ক্রেস্ট, চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, মেডিল রাখার কোন জায়গা না থাকায় ঘরেই নষ্ট হচ্ছে। এদিকে রোকসানা ও তার সহপাঠী ফুটবল খেলোয়াররা পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়মিত চর্চার করছেন স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক জহিরুল ইসলাম মিলনের অধীনে। ফুটবল কন্যা রোকসানার বাবা ভ্যান চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন। তাদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। তার মা কিছু টাকা যোগাড় করে বাড়ির কাছে শুরু করেন চা বিক্রির কাজ। রোকসানা পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পড়াশুনায় ভাল রোকসানা ফুটবলও ভাল খেলে। প্রাথমিকে পড়ার সময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ফুটবল খেলায় অংশ নেয়। এরপর থেকেই শুরু পরপর অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবলে অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেরা ফুটবল খেলোয়ার হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। গত বছর অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবলে ঢাকার বাফুফের মাঠে ৩০০ ছেলে মেয়ের মধ্যে তিনজনকে বাছাই করা হয় স্পেনে পাঠানোর জন্য। এরমধ্যে মেয়ে হিসেবে শুধু রোকসানাই সুযোগ পায় স্পেনে যাওয়ার জন্য। বাকি দুইজন ছেলেও সেই সময় স্পেনে যাওয়ার সুযোগ পায়। স্পেনে যাওয়ার জন্য স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহায়তায় পাসপোর্টসহ যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করার পরও অভাব-অনটনের কারণে আর যেতে পারেননি। স্বপ্ন ভেঙে যায় তার। তারপরও থেমে যায়নি রোকসানা। এরপরও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেরাদের সেরা হয়েছেন। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট (বালিকা) অনূর্ধ্ব ১৭ ফাইনালে রোকসানা একাই ৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার লাভ করে। তবে ফুটবল খেলায় পরিচর্যার পাশাপাশি ভাল কোচের অধীনে থাকায় মেধা বিকাশ হচ্ছে না রোকসানার। রোকসানা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন ফুটবলার হবো। হতদরিদ্র সংসারে অভাব ঘোচাব। স্পেনে যাওয়ার সুযোগ হলেও অভাব অনটনের কারণে যেতে পারিনি। তারপরও হতাশ হয়নি। ফুটবল খেলে একদিন দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসবোই।’ রোকসানার মা রুপা বেগম বলেন, ‘মেয়েটা ফুটবল খেলে। নানান জনে নানা ধরনের মন্তব্য করে। খারাপ লাগলেও মেয়েটা কান্নাকাটি করতো আবার যাইতো খেলতে। এক সময় স্বামী ভ্যান চালালেও এখন আর পারেন না। খুব কষ্টে চা বিক্রি করে সংসার চলে আমাদের। মেয়েডা দেশের বাইরে যাবে দেশের মুখ উজ্জল করবে এটা গর্বে বুকটা ভরে গিয়েছিল। কিন্তু কি করার গরিব মানুষের সব স্বপ্নইতো আর পূর্ণ হয়না।’ রোকসানার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যান চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড় পা হারিয়ে এখন পঙ্গু। স্ত্রীর চা দোকানে বসে তাকে সহযোগিতা করি। এতে সংসার চালানোর পাশাপাশি রোকসানার পড়াশুনা খরচ যোগার করা খুবই কষ্টের। আবার মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলে এই সমাজের লোকজন সেটা মানতে চায় না। তারপরও মেয়ে ভাল ফুটবল খেলায় গ্রামের অনেকেই সহায়তা করে। চা খেতে এসে মানুষজন মেয়ের ফুটবল খেলার প্রশংসা করে। এটা খুবই ভাল লাগে। অর্থের অভাবে মেয়ে ভাল কোন জায়গায় ভর্তি করাতে পারছিনা।’ রোকসানার কোচ স্থায়ীয় ক্রীড়া সংগঠক ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য জহিরুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ফুটবলাররা অবহেলিত। মেয়ে খেলোয়ারদের পৃষ্ঠপোষক বা তত্ত্বাবধায়নের জন্য কেউ নেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ক্রীড়া অফিস থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এই উপজেলার মেয়েরা জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলায় সুযোগ পেলেও জেলা সংস্থার কোন মূল্যায়ন পাওয়া যায় না। বাফুফের সহযোগিতা পেলে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার মত প্রত্যন্ত এই গ্রাম থেকেই খেলোয়ার তৈরি হবে। রোকসানা অন্য মেয়ে ফুটবলার চেয়ে মেধাবী একজন খেলোয়ার। মেধা থাকলেও অভাব-অনটন তার বিকশিত হওয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘রোকসানা পড়ালেখায় যেমন ভাল ফুটবলও ভাল খেলতে পারে। তার কারণে এবার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে অভাবের কারণে তার মেধাবিকাশ হচ্ছে না। নিয়মিত ভাল কোচের অধীনে চর্চা করতে পারলে তার মেধার বিকাশ ঘটবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসাইন বলেন, ‘রোকসানা সম্ভাবনাময় একজন ভাল ফুটবল খেলোয়ার। রোকসানার পারিবারিক অবস্থা বেশি ভাল নয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’ পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেনেজিং কমিটির সভাপতি মাসউদুল আলম উচ্ছল বলেন, রোকসানা ভালো একটা মেয়ে ভালো একজন ফুটবলার এবার বঙ্গমাতা অ-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ধনবাড়ী কে টাংগাইল জেলা চ্যাম্পিয়ন করেন এবং ৯ টি গোল করে টুনামেন্টের সেরা গোল দাতার পুরস্কার পেয়েছে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com