কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের ৫তলা ভিত্তির উপরে ৩তলা ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। ভবনে যে ইটের গাঁথুনি দেয়া হয়েছে তাও নিম্নমানের। একইভাবে ঢালাইয়ের কাজে নিম্নমানের পাথর ও মাটি-মেশানো বালু ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভবনের ভিত্তিতে (ব্যাচ ঢালাই) প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে রড ব্যবহার করা হয়েছে- যার ফলে পুরো ভবনই থাকবে ঝুঁকিতে। ঢালাইয়ে বাঁশ ও কাঠের সাটারিং নিষেধ, অথচ এসব ব্যবহার করেই কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন ভবন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব অনিয়মের তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের ৫তলা ভিত্তিযুক্ত ৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স মা কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২০১৯ সালের জুনের দিকে কাজ শুরু হয় এ ভবনটির। এ বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। মঙ্গলবার (১৪ই জুন) নির্মাণাধীন ভবন ঘুরে দেখা গেছে, দুই নম্বর ইটের গাঁথুনি দেয়া। নিম্নমানের পাথর আর মাটির মতো বালুর মিশ্রণে ঢালাই দেয়া হয়েছে। দরপত্রের কার্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে ভবনের ঢালাইয়ের কাজে কোনোক্রমেই বাঁশ ও কাঠের সাটারিং ব্যবহার করা যাবে না। স্টিল ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ওই ভবনের বিম ও কলাম (খাম) ঢালাইয়ের কাজে বাঁশের ঠিকানা আর কাঠ ব্যবহার করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও টাইলস লাগানোর কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালি ও নিয়মের চাইতে কম সিমেন্ট। এ ব্যাপারে একজন নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ‘গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করেই ঠিকাদার কাজ করছেন। আমাদের যেভাবে করতে বলেছে সেভাবেই করছি। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করছেন কিন্তু গণপূর্ত অধিদফতরের কোনো ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সহকারী প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি ওই দিন। স্থানীয়রা জানান, গণপূর্ত বিভাগের কোনো প্রকৌশলী থাকেন না। নির্মাণাধীন ভবনের কাছে নির্মাণ প্রকল্পের নাম, অধিদফতর ও বরাদ্দের বর্ণনাসমেত সাইন বোর্ড লাগানোর নিয়ম থাকলেও সেখানে কোনো সাইন বোর্ড দেখা যায়নি। স্থানীয় একজন বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী ও কম পরিমাণে রড ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ভবন বেশিদিন টিকবে না। ঠিকাদার, মিস্ত্রি ও শ্রমিকরা তাদের খেয়াল-খুশিমতো কাজ করছে। দেখার কেউ নেই। একদিন দেখবেন সাভারের রানা প্লাজার মতোই ধসে পড়বে ভবনটি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সচেতন ব্যাক্তি বলেন, কাজের সময়ও গণপূর্তের ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোনো ইঞ্জিনিয়ারকে এখানে দেখা যায় না। যেভাবে কাজ হচ্ছে, এ ভবন অচিরেই বিপদ ডেকে আনবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহুল চন্দ বলেন, ভবন নির্মাণের অনিয়মের বিষয়টি আমি সঠিক বলতে পারবো না। কারণ কাজটি গণফূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজটি হচ্ছে। এবিষয়টি তাদের ইঞ্জিনিয়াররা ভালো বলতে পারবে। এছাড়াও ভবনটি এ জুনে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তারা কাজ শেষ করতে না পারায় ভবনটি হস্তান্তর করতে পারেনি। অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার নাজমুল হাসান শিপনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মোঃ মানিক বলেন, ‘আমাদের কিছু ত্রুটি ছিল, তা সংশোধন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ ইব্রাহিম খলিল বলেন, প্রথমে তারা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে চাইলেও তা আমরা বাতিল করে দিয়েছি। অন্যান্য যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সমাধানের জন্য ঠিকাদারকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরও আমরা প্রয়োজনে সরেজমিন গিয়ে তাদের আর কোন অনিয়ম পেলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।