লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে কুয়েতে আটক হওয়ায় সারাদেশসহ সংসদীয় আসনে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। বিভিন্ন অভিযোগে কুয়েতে আটক হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মানব পাচারের সাথে জড়িত থাকলে সুষ্ঠ তদন্তের দাবী ও দোষী প্রমানিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ বলছেন, এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। তিনি আওয়ামীলীগের কেউ না। তিনি কোনো অপরাধ করলে এর দায়ভার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নিবে না। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল আওয়ামীলীগের কোনো পদ-পদবীতে নেই এবং তিনি আওয়ামীলীগের কেউ না এমনটা দাবী করছেন সংসদীয় আসনের আওয়ামীলীগের নেতারা।
উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ জানান, এমপি পাপুল কি কারণে গ্রেফতার হয়েছেন তা আমার জানা নেই। তবে তিনি কোনোদিন আওয়ামীলীগ করেননি এবং বর্তমানেও আওয়ামীলীগের কোনো পদ-পদবীতে নেই। জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আপেল প্রতীকে ভোট করে বিজয়ী হন। তখন আওয়ামীলীগের কোনো প্রার্থী না থাকায় দলীয়ভাবে তাঁকে সমর্থন দেয়ায় তাঁর পক্ষে ভোট করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ ইসমাইল খোকন বলেন, কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় এমপি নন। যদি তিনি মানব পাচার ও অর্থ পাচার করে থাকেন তাহলে ঐ দেশের প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার হওয়া উচিত। আর যদি এসব ঘটনার সাথে জড়িত না হন তাহলে তাঁর মুক্তিও দাবি করেন তিনি।
এদিকে এমপির সাবেক স্থানীয় প্রতিনিধি ও পৌর আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কাজী জামশেদ কবির বাক্কি বিল্লাহ মানব পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কুয়েত সরকার ও ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের শিকার এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। তিনি তাঁর মুক্তি দাবি করেন এবং সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে জনগনের নেতা জনগনের মাঝে নিষ্কলুশ হয়ে আবার ফিরে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পি’র রায়পুর উপজেলা সভাপতি ও সাবেক পিপি এডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, নির্বাচনের সময় টাকার বিনিময়ে তিনি এমপি হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করার কথা থাকলেও তিনি কিছুই করেন নি। মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে গ্রেফতার হওয়ায় তিনি লক্ষ্মীপুর বাসীকে ছোট করেছেন। আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, সংসদীয় আসনের একজন নাগরিক হিসেবে এহেন ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত। এ ধরণের ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে সংসদ সদস্য আমাদেরকে অপমানিত করেছেন। সে দেশের প্রচলিত আইনে সংসদ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
জানা যায়, বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পাপুল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির সমোঝোতার মাধ্যমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ নোমান। পরে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আত্মগোপনে চলে যান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। ঐ সময় আলোচনা ছিল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পাপুল মোহাম্মদ নোমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন। কাজী শহীদ ইসলামের ফেসবুক ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ, কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রপ্তানিতে যুক্ত। এছাড়া তিনি বেসরকারী খাতের এন.এর.বি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। এবং এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানীর চেয়ারম্যান। স্বতন্ত্র এই সাংসদ আওয়ামীলীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
এমএস/প্রিন্স/এমআইপি