ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। জিবরাইল (আ.) কর্তৃক রাসুল (সা.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হয়, ‘ইসলাম কী?’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলাম মানে এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, আর মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত দেওয়া, রমজানের রোজা রাখা, সামর্থ্য থাকলে হজ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৯৫)
‘হজ’ কেবল সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭) ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহর মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ। আর জান্নাতই মকবুল হজের পুরস্কার। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩) বিশ্বনবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে ‘সর্বাধিক উত্তম আমল কোনটি?’ তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ইমান আনা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এরপর কোনটি?’ তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বলেন, হজে মাবরুর বা মকবুল হজ করা। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৯)
হজে যাওয়ার ফজিলত: রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, তারপর পথেই তার মৃত্যু হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাকে গাজি, হাজি ও ওমরাহকারীর সওয়াব দান করবেন। (শুআবুল ঈমান) অন্য হাদিসে এসেছে : যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হয়, তারপর তার মৃত্যু এসে যায়, আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি ওমরাহর উদ্দেশ্যে বের হয়, তারপর তার মৃত্যু এসে যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ওমরাহর সওয়াব দান করবেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ৬৩৫৭)
হজ মানুষের পাপ মোচন করে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজ সম্পন্ন করে, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে। (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)
হজ নারী ও দুর্বলদের জন্য জিহাদস্বরূপ: রাসুল (সা.) বলেন, দুর্বলদের জিহাদ হচ্ছে হজ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯০২)
অন্য হাদিসে এসেছে : রাসুল (সা.) বলেন, বৃদ্ধ, শিশু, রোগী ও নারীদের জিহাদ হচ্ছে হজ ও ওমরাহ। (সুনানে নাসায়ি : ২৬২৬) আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। সুতরাং আমরা (নারীরা) কি জিহাদে শরিক হব?’ তিনি বলেন, না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে হজে মাবরুর। (বুখারি, হাদিস : ১৫২০)
হজযাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধি: ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (সা.) বলেন, আল্লাহর পথের সৈনিক, হজযাত্রী ও ওমরাহযাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯৩) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ করার সামর্থ্য ও তাওফিক দান করুন। আমিন।