কখন মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান, দমকা হাওয়া, বজ্রধ্বনি শুরু হবে তা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই জানে না। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, অদৃশ্যের চাবি পাঁচটি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, ‘আল্লাহ তায়ালারই কাছে কিয়ামতের ইলিম (জ্ঞান) এবং তিনিই মেঘ বৃষ্টি নাজিল করেন।’ (বুখারি) বাতাস মানুষের জন্য উপকারী। অপকারীও বটে। তাই বলে বাতাসকে গালমন্দ করা যাবে না। হাদিস শরিফে বাতাসকে গালমন্দ করতে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘বাতাস আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণ নিয়ে আসে, আবার শাস্তিও নিয়ে আসে। অতএব তোমরা বাতাসকে গালমন্দ করো না, বরং আল্লাহর কাছে এর কল্যাণকর দিকটির প্রার্থনা করো এবং এর অকল্যাণকর দিকটি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আমি পুবালি হাওয়ার মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছি এবং আদ জাতি পশ্চিমা হাওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। বাতাসের আগমন বৃষ্টিকে স্বাগত জানায়। নামে প্রবল বৃষ্টি। মেঘ-বৃষ্টি-ঝড় প্রকৃতির জন্য সুবাতাস বয়ে নিয়ে আসে, নিয়ে আসে অকল্যাণও। যা ক্ষতির কারণ হয়। বয়ে আনে দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষ শুধু অনাবৃষ্টি বয়ে আনে না, অতিবৃষ্টিও দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এই নয় যে, তোমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হবে না; বরং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হচ্ছে, তোমাদের প্রতি প্রচুর বৃষ্টি বর্ষিত হবে অথচ জমিন কোনো কিছু উৎপাদন করবে না।’ (মুসলিম) ঝড়-তুফান আর প্রবল বৃষ্টি মানুষের মনে ভীতি স ার সৃষ্টি করে। রাসূল সা: ঝড় তুফান শুরু হলে আল্লাহর কাছে করুণার দোয়া শুরু করে দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কখনো ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হলে নবী সা: নিজ হাঁটুদ্বয় পেতে বসে যেতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! এটাকে করুণাস্বরূপ করুন, একে শাস্তিস্বরূপ করবেন না। হে আল্লাহ! এটাকে মৃদু বাতাসে পরিণত করুন, ঝড় তুফানে পরিণত করবেন না।’ (বায়হাকি)
তাছাড়া, প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে রাসূল সা: আল্লাহর কাছে তার উত্তমতার ও কল্যাণের দোয়া করতেন। আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, যখন প্রবল ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হতো তখন নবী সা: বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর ভালো দিকটি এবং এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা আর একে যে উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে তার ভালো দিকটি কামনা করছি। আর আমি আপনার কাছে এর মন্দ দিকটি থেকে এবং এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা থেকে ও এটা যে উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে তার মন্দ দিক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।) আর যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো তখন তাঁর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত এবং তিনি (ভয় বিহ্বল চিত্তে) একবার ঘর থেকে বের হতেন আবার ঘরে প্রবেশ করতেন। একবার অগ্রসর হতেন, আবার পেছন ফিরে আসতেন। আর যখন স্বাভাবিক বৃষ্টি হতো, তাঁর চেহারা খুশিতে ভরে উঠত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ঝড়ের সাথে সাথে শুরু হয় বজ্রপাত। হাদিসে এসেছে, মহানবী সা: যখন মেঘের গর্জন ও বজ্রধ্বনি শুনতে পেতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদ্বাবিকা ওলা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিক’ (হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার ক্ষোভ ও রোষের দ্বারা হত্যা করো না এবং আমাদেরকে তোমার শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করো না, বরং আমাদেরকে প্রশান্তি দান করো)।’ (আহমদ, তিরমিজি) অন্য হাদিসে এসেছে, তিনি যখন মেঘের গর্জন শুনতে পেতেন, তখন কথোপকথন পরিত্যাগ করতেন এবং তিলাওয়াত করতেন, ‘আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার পবিত্রতা ঘোষণা করেছে মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসার সাথে এবং ফেরেশতাকুল পবিত্রতা ঘোষণা করে তাঁর ভয়ে।’ (সূরা আর রা’আদ-১৩) (মালিক)। লেখক : পরিচালক, খিদমাতুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন