মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝার ক্ষেত্রে আচার-আচরণ ও চারিত্রিক মাধুর্যতা বেশ ভূমিকা রাখে। তাই বিশ্বমাঝে শীর্ষ হতে প্রয়োজন উত্তম ও অনুপম চরিত্র। উত্তম চরিত্র হলো একটি সুন্দর ব্যক্তিত্বের দর্পণ। মহান আল্লাহ পথভ্রষ্ট মানবজাতিকে সিরাতুল মুস্তাকিমে ফিরিয়ে আনতে চারিত্রিক উৎকর্ষতায় শীর্ষে থাকা অসংখ্য মহামানবকে নবী-রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যারা উত্তম চরিত্র ও পবিত্র ব্যক্তিসত্তার মাধ্যমে মানবজাতিকে ধ্বংস থেকে মুক্তির পথে এনেছেন। তাদের মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন মানবতার পরম বন্ধু মুহাম্মদ সা:। যার মহান চরিত্র সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত’ (সূরা কলাম-৪)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর পবিত্র ওফাতের প্রায় ১৫০০ বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা আখেরি উম্মত হিসেবে দেখতে পাইনি তাঁর দেহের আপাদমস্তক কমনীয়তা এবং আরো দেখতে পাইনি তাঁর চারিত্রিক আভিজাত্য ও নমনীয়তা। আমরা শুধু পেয়েছি তাঁর মহান আদর্শ ও উত্তম উপদেশ। যা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা হতে পারব চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ। তাই মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সা:-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ’ (সূরা আহজাব-২১)।
স্বভাবকে উত্তম করা : আনাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: সর্বোত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন’ (বুখারি-৬২০৩)। রাসূল সা: মানুষকে সর্বোত্তম স্বভাবের অধিকারী হওয়ার শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো সে, যে সর্বোৎকৃষ্ট স্বভাবের অধিকারী’ (মুসলিম-২৩২১)।
চেহারার প্রফুল্লতা ধরে রাখা : একজন মুমিন ব্যক্তি সদাসর্বদা প্রফুল্ল থাকেন। তার চেহারায় প্রফুল্লতার ছাপ থাকবে। একে অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হলে চেহারায় প্রফুল্লতার ছাপ রাখা মুমিনের কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো নেক আমলকে তুচ্ছ মনে করবে না। যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে প্রফুল্ল চেহারায় সাক্ষাতের বিষয়টি হোক না কেন’ (মুসলিম-২৬২৬)। এমনকি প্রফুল্লতার সাথে মুচকি হাসি দেয়াও দান-সদকাস্বরূপ। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসি দেয়াও এক প্রকার সদকা’(তিরমিজি-১৯৫৬)।
বিবেক ও ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা : মুমিনের জীবন কখনো অশান্ত ও অস্থিরতার মাধ্যমে চালানো যাবে না বরং শান্ত ও স্থিরতার মাধ্যমে চালাতে হবে। রাসূল সা: মুনযির ইবনে কায়েস রা:-কে লক্ষ করে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই তোমার মধ্যে দুটি গুণ আছে যা আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন তা হলো- বিবেক ও ধীরস্থিরতা’ (মুসলিম-১৭)।
দয়া ও নম্রতা অবলম্বন করা : দয়া একটি মহৎ গুণ। উত্তম চরিত্রের সর্বোৎকৃষ্ট গুণ হচ্ছে দয়া ও নম্রতা। রাসূল সা: বলেছেন, ‘অবশ্যই মহান আল্লাহ নম্র তিনি সব বিষয়ে নম্রতা ভালোবাসেন’ (বুখারি-৬৯২৭)। নম্রতা সব বিষয়কে শোভাবর্ধক ও দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে নম্র্র আচরণ যেকোনো বিষয়কে শোভিত করে তোলে। পক্ষান্তরে কোমলতা বর্জন যেকোনো বিষয়কে কলুষিত করে তোলে’ (মুসলিম-২৫৯৪)।
সহজীকরণ ও সুসংবাদ প্রদান করা : মানুষের সাথে কঠিন ভাষায় কথা বলাও উত্তম চরিত্রে শোভা পায় না। কথা ও কাজে সর্বদা সহজ পন্থা অবলম্বন করাই উত্তম চরিত্র। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা সহজ করবে কঠোরতা অবলম্বন করবে না। সুসংবাদ প্রদান করবে, ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেবে না’ (বুখারি-৬৯)।
বিনয়ী হওয়া : আল্লাহ তায়ালা বিনয়কে পছন্দ করেন। মানুষও বিনয়ী ব্যক্তিকে পছন্দ করে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার কাছে অহি প্রেরণ করেছেন, তোমরা পরস্পর বিনয়ী হও। তোমাদের কেউ যেন কারো ওপর গর্ব, অহঙ্কার ও জুলুম না করে’ (মুসলিম-২৮৬৫)। বিনয়ী ভাব মানুষকে মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ করে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ী হবে আল্লাহ তাকে কেবল উপরে উঠিয়ে দেবেন’ (মুসলিম-২৫৮৮)। মানুষের মাঝে বিরোধ মীমাংসা করা : মানুষের মধ্যকার সামাজিক বিরোধ ও ঝামেলা মীমাংসা করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এতে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হয় ও মীমাংসাকারীর চারিত্রিক মাধুর্যতা বৃদ্ধি পায়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করা সদকাস্বরূপ’ (বুখারি-২৯৭৯)। অন্যের প্রয়োজন পূরণ ও দোষত্রুটি গোপন করা : বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আদর্শ ও উত্তম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসূল সা: বলেছেন, ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে বিপদে ফেলে দেবে না। যে ব্যক্তি ভাইয়ের প্রয়োজনে পাশে থাকবে আল্লাহ তার প্রয়োজনে পাশে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের একটি বিপদ দূর করে দেবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার একটি বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন রাখবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন’ (মুসলিম-২৫৮০)। লেখক : শিক্ষার্থী, দারুণ নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা, ডেমরা, ঢাকা