বর্তমানে বিশ্বব্যাপী গড়ে এক বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ স্ট্রোকের শিকার হয়। রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে স্ট্রোক বা ব্রেন অ্যাটাক হয়। বিশ্বব্যাপী এটি মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আ লিক পরিচালক চিকিৎসক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিংয়ের মতে, চারজনের মধ্যে অনন্ত একজন তাদের জীবদ্দশায় স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন। ঋঅঝঞ পদ্ধতি যা মুখমন্ডল ঝুলে পড়া, হাতের দুর্বলতা, কথা বলার অসুবিধা ও সময়মতো জরুরি পরিষেবা, স্ট্রোকের ঘটনা ও প্রভাব কমাতে পারে।
স্ট্রোক হওয়ার কারণ কী? জীবনধারায় অনিয়ম অবশ্যই স্ট্রোকের জন্য দায়ী। অন্যদিকে মেডিকেল ঝুঁকির কারণগুলো হলো উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ইতিহাস। স্ট্রোকজনিত অকালমৃত্যুর দুই-প মাংশই ধূমপানের কারণে। এছাড়া ব্যায়াম বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, অবৈধ ওষুধ ও অন্যান্য অনুরূপ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতাও স্ট্রোকের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
স্ট্রোকের কোন লক্ষণ কয়েক বছর আগ থেকেই প্রকাশ পায়? সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, স্ট্রোকের কয়েক বছর আগেই মানুষের মধ্যে একটি গুরুতর লক্ষণ প্রকাশ পায়। আর তা হলো হতাশা কিংবা বিষণ্নতা। জার্মানির মুনস্টার ইউনিভার্সিটির পিএইচডি, গবেষণার লেখক মারিয়া ব্লোচল নিউজ অ্যাজেন্সি এএনআইকে বলেছেন, ‘যাদের স্ট্রোক হয়েছে তাদের মধ্যে হতাশা সবচেয়ে বেশি।’
গবেষণা বলছে, স্ট্রোকের পরে নয় বরং এর কয়েক বছর আগ থেকেই রোগী হতাশায় ভুগতে শুরু করে। গবেষণাটি ১০ হাজার ৭৯৭ জন প্রাপ্তবয়স্কদের উপর ১২ বছর ধরে পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৬৫ বছর। গবেষণার সময়কালে মোট ৪২৫ জনের স্ট্রোক হয়েছিল। সব তথ্যাদি বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা জানান, বিষণ্নতা শুধু একটি স্ট্রোক-পরবর্তী ঘটনা নয়, এটি একটি প্রাক-স্ট্রোক ঘটনাও বটে। যা গুরুতর প্রভাব ফেলে রোগীর মস্তিষ্কে। গবেষকরা দেখেছেন, স্ট্রোকের দুই বছর আগ থেকেই রোগীরা দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, বিষণ্নতা ও মানসিক চাপে ভুগতে শুরু করেছিলেন। যা স্ট্রোকের পরে আরও বেড়ে যায়। স্ট্রোকের ১০ বছর পর বিষণ্নতার গুরুতর আকার ধারণ করে।
বিষণ্নতার লক্ষণগুলো কী কী? বিষণ্নতার লক্ষণগুলি প্রাথমিকভাবে খুব সূক্ষ্ম। প্রাথমিক পর্যায়ে কেউই টের পান না যে তিনি হতাশায় ভুগছেন। বিষণ্নতার লক্ষণগুলো হলো- >> মনোনিবেশে সমস্যা >> ক্লান্তি >> কোনো কারণ ছাড়াই নিজেকে অপরাধী মনে করা >> নেতিবাচকতা ও হতাশাবাদ >> অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস >> অস্থিরতা >> আগ্রহের অভাব >> খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন >> নিয়মিত মাথাব্যথা >> অন্ত্র সম্পর্কিত সমস্যা >> শূন্যতার অনুভূতি।
গবেষণার প্রধান লেখক মারিয়া ব্লোচ বলেছেন, ‘এসব লক্ষণ দেখলে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। স্ট্রোকের আগে হতাশার ক্রমবর্ধমান লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। বিশেষ করে মেজাজ পরিবর্তন ও ক্লান্তি উপসর্গ স্ট্রোকের আগাম সংকেত হতে পারে।’