এখন ভরা বর্ষা মৌসুম, এ মৌসুমকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন দক্ষিনাঞ্চলের নদীবহুল জেলা পিরোজপুরের নেছারাবাদের নৌকা পল্লীর কারিগররা। পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার আটঘরের নৌকার হাট শত বছরের ঐতিহ্য। নদী-খাল বেষ্টিত এই জেলার প্রধান বাহন নৌকা। এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গেও ওতপ্রোত জড়িয়ে আছে নৌকা। ফলে নৌকার এই চাহিদাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এই নৌকার হাট। পিরোজপুর থেকে প্রায় ৪০ কিলো মিটার উত্তরের উপজেলা নেছারাবাদ। এ উপজেলার বলদিয়া একটি সমৃদ্ধ ইউনিয়নরে এই আটঘরের নৌকার হাট শত বছরের ঐতিহ্য। দক্ষিনাঞ্চল নদীবহুল ও বিল অঞ্চলের ঘরের প্রতি সদস্যের নৌকা প্রয়োজন হওয়ায় এবং পেয়ারা বাগানেকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় গড়ে উঠে নৌকা শিল্পের। নৌকার বিক্রেতা অমল হালদার জানান,পূর্ব পুরুষদের এ পেশা ধরে রাখতে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই দিনরাত ব্যস্ত রয়েছেন তারা। জৈষ্ঠ্য থেকে ভাদ্র মাসের প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার বসে এই নৌকার হাট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। প্রায় শত বছরের পুরাতন এ নৌকারহাট প্রথম কবে বসে ছিল সে সমন্ধে সঠিকভাবে কেউ বলতে না পারলেও জানাযায় প্রায় ১০০ বছরের অধিক সময় ধরে । বিভিন্ন কাঠ দিয়ে ছোটবড় এই নৌকা তৈরি হয় মূলত রেনট্রি, মেহগনি এমনকি সারি চাম্বল গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। এক একটি নৌকা তৈরিতে কমপক্ষে সাতদিন সময় লেগে যায়। আকারভেদে এক একটি নৌকা ২৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা বিক্রি করা হয়। তবে বড় নৌকা গুলো ৭০০০-৮০০০ টাকাও বিক্রি করা হয়। পিরোজপুর নেছারাবাদের, আটঘর নৌকার হাট ইজারাদার, আব্দুল আলিম জানান, নৌকাগুলো কম দাম থাকার কারণে তিনি প্রতিবছরই নৌকা কিনতে আসেন পেয়ারা ব্যবসায়ীরা ও আশেপাশের নৌকা ব্যবসায়ীরা। মূলত পেয়ারা বাগানের কাজে এ নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়েক মাসের প্রয়োজন অনুযায়ী এ নৌকা কিনে থাকেন ক্রেতারা। পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির মোঃ গোলাম মাওলা নকীব জানান,শতবছরের নৌকার কারিগররা অর্থাভাবে আছে। হাটটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নাই। জেলা ব্যবসায়ী সমিতি ও চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি থাকবে তাদের জন্য সুনিদিষ্ট জায়গা এবং তারা যেনো ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারে। পিরোজপুরের তিন টি উপজেলার ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। নৌকা তৈরীর কারিগররা বলেন পূর্ব পুরুষদের এ পেশা ধরে রাখতে তাদের প্রয়োজন সরকারী সহযোগিতা।