বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আলী আহসানের জন্ম হয়েছিল ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ। এটি ছিল এমন এক যুগসন্ধিক্ষণ, যখন বাংলার মানুষ শোষকগোষ্ঠীর উৎপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছিল। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের করতলগত। পরাধীনতার শৃঙ্খলে জীবনযাপনের মধ্যে শিল্প-সাহিত্যকলায় প্রভূত উন্নয়নের চিন্তাই করা যেত না তখন। নানা রকম বৈষম্য, কুসংস্কার ও সাস্কৃতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে বাংলার সামাজিক জীবন আবর্তিত ছিল। ঠিক এ সময়ে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা তথা সামগ্রিক দুর্গতি মোচনের প্রত্যয়ে বাঙালি মুসলমানদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন সত্যাশ্রয়ী কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সমাজসংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে, যারা শিক্ষা, সমাজ ও আধুনিক মমনশীলতায় বিরাট অবদান রেখে গেছেন। তাদের মধ্যে সৈয়দ আলী আহসান অন্যতম। বুদ্ধি-বিবেচনা, সৃজনক্ষমতা ও মননসত্তায় সৈয়দ আলী আহসানের তুলনা বিরল। তিনি মুক্তচিন্তা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিস্ময়করভাবে অগ্রসর হয়েছেন। পরাধীনতার গ্লানির মধ্যেও মেধা-মনন ও বিচক্ষণতার ঐশ্বর্য নিয়ে তিনি ক্রমে ক্রমে বড় হয়েছেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন।
জ্ঞানের প্রসারতা, পা-িত্য ও দর্শনের মাধ্যমে আমাদের ভাষা, মাটি-মানুষ ও দেশের মর্যাদাকে উচ্চকিত তরে তুলেছেন। শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞানের গভীরতা এবং আধুনিক সৃজনক্ষমতায় তার সমকক্ষতা পাওয়া যায়নি। বৈচিত্র্যময় জীবন ও কর্মের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেছিলেন অভাবনীয় সাফল্য। ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা পড়াতেন।
বিশ্বের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদদের সাথে ছিল তার সুগভীর সম্পর্ক। জীবদ্দশায় পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও সাহিত্য সম্মেলনে বহুবার অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যের রস আস্বাদনে সমসাময়িক বাংলাদেশে তার মতো এতটা সাফল্য আমাদের দেশে বিরল। তিনি ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, ফারসি, হিন্দি, উর্দু ও সংস্কৃত এমনকি আমাদের প্রাচীন আদি দেশীয় ভাষার প্রয়োগ রেখে বিদেশি ভাষার কল্যাণবহ দিকগুলোকে বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত করে আমাদের সাহিত্য জগৎকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করেছেন। আবার বিশ্বসাহিত্যের পরিম-লে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অবারিতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে স্বজাতির মুখপত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি আমাদের শিক্ষা, সভ্যতা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রবক্তা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। সৈয়দ আলী আহসানের বিদেশি ভাষার ওপর অগাধ পা-িত্য সম্পর্কে দেশের শীর্ষস্থানীয় কবি ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ শামসুল হক লেখেন :
‘হিন্দি জানা বিদগ্ধজন হিসাবে সৈয়দ আলী আহসানই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বভারতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আবহমান বাংলা সাহিত্যের তিন যুগে-প্রাচীন যুগে, মধ্য যুগে এবং আধুনিক যুগে সাবলীল সঞ্চরণে সক্ষম ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বোঝার জন্য প্রাসঙ্গিক যেসব ভাষা জানা দরকার, তার সবগুলোই তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিলেন না।’
তিনি বিদেশি ভাষা ও সাহিত্যের রস আস্বাদনে যেমন পারঙ্গম ছিলেন, তেমনি মাতৃভাষায় এমনটাই দক্ষ ছিলেন যে কোনো কঠিন বিষয়কে অবলীলায় দুর্বোধ্যহীন ও সাবলীলভাবে বিশ্লেষণ করতে পারতেন এবং পরিশীলিতভাবে তা উপস্থাপন করতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিক ও নোবেল বিজয়ীদের উৎকৃষ্ট সাহিত্য ও কাব্যসাধনা সম্পর্কে লিখেছেন। তার বিশ্লেষণ ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। আমাদের আদি পুঁথিসাহিত্য এবং প্রাচীন ভাষা তত্ত্বেও ছিল তার আশ্চর্য আধিপত্য। তার রচিত ‘দোহা-কোষ গীতি’, ‘সন্দেশ রসিক’, ‘চৌর পঞ্চাশিকা’ প্রভৃতি পাঠ করলে তার অসাধারণ পা-িত্য লক্ষ করা যায়।
ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিক্ষায় প্রভূত সাফল্য অর্জনকারী ও সত্যাশ্রয়ী সৈয়দ আলী আহসান জ্ঞানান্বেষণে বিরামহীন সাধনা করেন গেছেন। জীবনভর জ্ঞানের বিশাল পরিম-লে অবস্থান করেও সর্বদা নতুনকে আবিষ্কার করতে কিংবা সুপ্রাচীন ঐতিহ্যিক সভ্যতাকে নতুন করে বর্ণনা করার শিল্পশৈলী ও অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। তিনি লিখতেন যেমন সাবলীল, তেমনি গল্পের মতো করে সবকিছুকে রসালোভাবে ব্যক্ত করতে পারতেন।
আমার কলেজজীবন থেকেই আমার সৈয়দ আলী আহসান স্যারের সঙ্গে পরিচয়। আমার শিক্ষাজীবনের সেই সময় থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্যারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম এবং যোগাযোগ ছিল। কিন্তু জেনারেল এরশাদের সময় তার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সাহিত্যের আদর্শ নির্মাতাদের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধাবোধ আছে, তেমনি তাদেরকে আমি বিতর্কের ঊর্ধ্বে দেখতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। তা ছাড়া এরশাদের পুরো সময়টিতে আমি বহির্বিশ্বে পড়াশোনায় লিপ্ত ছিলাম। জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের সময় কবি ফজল শাহাবুদ্দীন ও তার নেতৃত্বে এবং দেশের আরও কিছু স্বনামধন্য কবি মিলে আরেকটি কবিতার প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় বিদেশে বসে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার আমেরিকা আসার পূর্বেও দেখেছি তিনি প্রায়ই হাতের ব্যথার কথা বলতেন। অনেক সময় লিখতে তার বেশ কষ্ট হতো। দেখেছি, অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে ঘরে বসিয়ে লেখার কাজে লাগাতেন। কেন জানি, তিনি আমাকেও মেধাবী ভেবেছিলেন। যেকোনো বিষয়ের ওপর তিনি অনর্গল বলে যেতেন আর লিপিকাররা তা লিখতেন।
মানুষ নিয়ত একাকী। প্রাণপ্রিয় স্ত্রী কমর মুস্তারীর অকালবিয়োগের পর সৈয়দ আলী আহসান অনেকটা একা হয়ে পড়লেও কখনো তাকে নিঃসঙ্গ মনে হয়নি। সর্বদা কোনো না কোনো একটা মহৎ কাজে নিয়োজিত থাকতেন। পুণ্যময়ী স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘কমর মুস্তারী সাহিত্য পুরস্কার’। প্রতিবছর দেশের কৃতী ব্যক্তিদের মাঝে নিজ হাতে সেই পুরস্কার প্রদান করতেন। এখানে তার হৃদয় ও মনের বিশালতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি গুণগত বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে যেকোনো পদের মানুষকেও স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠিত হতেন না।
ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত রসিক সৈয়দ আলী আহসান প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। প্রিয় সহধর্মিণীকে হারিয়ে তিনি প্রায় দেড় যুগ কাটিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তার এ একাকী জীবনাচারে কখনো স্ত্রীকে বিস্মৃত হননি। একদিন বিকেলে তার বাসায় গিয়ে দেখি, স্যার বাড়ির আঙিনায় পায়চারি করছেন। দুই দিন আগে তার বড় ছেলে মেহরাব, পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিরা আমেরিকায় চলে গেছেন। আমি ও স্যার যথারীতি ঘরে প্রবেশ করলাম। কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটি চা নিয়ে এল। দেয়ালে টানানো সুদৃশ্যমান জলরঙের একটি ক্যানভাস দেখিয়ে আমার নিকট জানতে চাইলেন, ‘কেমন হয়েছে?’ উত্তরে বললাম, ‘স্যার, অসাধারণ।’ আমার বুঝতে বাকি রইল না যে স্ত্রীর এই ছবির নির্মাতা স্বয়ং তিনি নিজেই। শিল্পকলা ও আর্টে সৈয়দ আলী আহসানের অনেক কৃতিত্ব রয়েছে। তার রচিত ‘শিল্পী ও শিল্পবোধ’ শীর্ষক অমূল্য গ্রন্থটি (শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত) পাঠ করলে এ বিষয়ে তার বৈতরকার অপার যোগ্যতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’-এর প্রথম চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন।
নৈরাশ্যবাদ ও হতাশাবোধ কবি সৈয়দ আলী আহসানকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাপারে মাঝেমধ্যে তার দুঃখবোধ জেগে উঠত। কখনো কখনো তিনি আমাদের কতিপয় কবি-সাহিত্যিকের অরুচিকর নি¤œমানের রচনা নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হতেন। একবার আমি বাংলাদেশের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত কবি ও গবেষকের রচিত দুটি উপন্যাস, যা ‘বাড পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল, স্যারের হাতে তুলে দিলাম। এক সপ্তাহ পর উপন্যাস দুটির ব্যাপারে স্যার দুঃখবোধ প্রকাশ করলেন এবং আক্ষেপ করে বললেন, ‘এমন শিক্ষিত কবিরা আরও বিখ্যাত হলেও এ ধরনের কদর্যপূর্ণ রচনা অন্তত তোমার পাবলিকেশন্স থেকে বের করা উচিত হয়নি। কারণ, এতে সমাজ ও মানুষের কোনো উপকার নেই।’ অথচ আমাদের অনেক অল্পশিক্ষিত ও অপরিচিতদের কারো কারো মানোত্তীর্ণ রচনা দেখে তিনি আনন্দিত ও পুলকিত হয়েছেন।
রবীন্দ্র রচনাবলির ওপর সৈয়দ আলী আহসানের একটি পা-ুলিপি তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে বিধায় একদিন স্যার ফোন করে আমাকে ডেকে পাঠালেন। পত্রিকায় প্রকাশিত বেশ কয়েকটি লেখা সংবলিত একটি (ক্লিপিং) ফাইল আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘চা পানের ফাঁকে ফাঁকে এগুলো একটু উল্টে দেখো।’ আমি যত দেখেছি, মাথা আর উপরে ওঠাতে পারছিলাম না। আনন্দ আর উৎফুল্লচিত্তে বললাম, ‘স্যার! অসাধারণ। রান্না বিষয়ে এমন রচনা অবশ্যই ব্যতিক্রম।’ তিনি বললেন, ‘রান্নার ওপর এত বই বাজারে থাকতে এই বই দিয়ে তো তুমি খুব একটা লাভবান হবে না।’ সানন্দচিত্তে জানালাম, ‘ব্যবসা না হলেও এ জিনিস ছাড়তে আমি রাজি নই।’ সঙ্গে সঙ্গে নামকরণও ঠিক করে দিয়ে বললেন, ‘তাহলে বইয়ের নাম লিখো ‘আমার পছন্দের দেশ-বিদেশের রান্না’।
এক অসাধারণ রচনা। গল্পের মতো করে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে এমন রসালো বর্ণনা, তাও রান্না নিয়ে, আগে কখনো পড়িনি। আলোচ্য বইয়ের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্ত্রী চমৎকার রান্না করতে পারত। তখন আমি নিয়মিত রান্নাঘরে যেতাম এবং রান্না করতাম। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমি এখন আর রান্নাঘরে যাই না।’ একটি অসাধারণ ও রোমাঞ্চকর রচনার এই ছোট্ট একটি লাইনের মধ্যে পরমপ্রিয় স্ত্রীর প্রতি যে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার চিত্র তার সত্তাজুড়ে মিশে আছে, তা-ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যথার্থভাবে। কিন্তু এই বলে নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব তার চেতনাকে কখনো কাবু করে দিতে দেখেনি কেউ। পৃথিবীর চিরন্তন ও অমোঘ নিয়মের সবকিছুই সহজভাবে মেনে নিতে পারতেন তিনি।
হ্যাঁ, রান্নার ওপর সৈয়দ আলী আহসানের বইটি সে বছর বাংলা একাডেমি বইমেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পত্রপত্রিকায় ব্যাপক রিভিউ হওয়ার পর পাঠকদের বেশ কৌতূহলী করেছিল এই বলে যে, সৈয়দ আলী আহসান রান্নাও জানেন। নন্দিত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে সেই বই ‘বাড পাকলিকেশন্স’-এর স্টল থেকে কিনতে দেখেছি।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলা সাহিত্যাদর্শের অন্যতম প্রাণপুরুষ সৈয়দ আলী আহসান বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, অনুবাদক, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ। তিনি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও শিক্ষা উপদেষ্টা, জাতীয় অধ্যাপক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ১৯৬০-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন।
কর্মজীবনে শিক্ষকতার শুরুতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৪৯) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান (১৯৫৩-১৯৬০) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান এবং পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (১৯৭৫-৭৭), ১৯৭২-৭৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৫ এর সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেনেগালের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফরাসি ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি লিউপোল্ড সেডর সেংঘর ছিলেন কবি আলী আহসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আলী আহসানকে নিয়ে তিনি তার কবিতায় লেখেন :
‘তুমি এলে।
তোমার চোখ আমার চোখের
সামনে দিয়ে চলে গেল,
তোমার চোখ ঈষদুষ্ণ বাড়ির স্পর্শে
চুম্বকের স্বাদ পেল।’
অন্নদাশংকর রায়ের লেখায় : ‘তিনি একজন সত্যিকার কবি। যেমন হৃদয়বান তেমনি রূপদর্শী। তিনি যে ভাষায় লেখেন তা খাঁটি বাংলা। তার কবি পরিচয়ই শ্রেষ্ঠ পরিচয়।’ আধুনিক উর্দু সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি কলিম সাসারামী সৈয়দ আলী আহসানের ৬০তম জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন এই বলে : ‘যখন বিধাতা সাহিত্যের জন্য একটি উজ্জ্বল কেন্দ্রবিন্দুর কথা ভাবলেন, সৈয়দ আলী আহসান সাহিত্যের দিগন্তে আবির্ভূত হলেন কিরণসঞ্চারী সূর্যের মতো এবং তখন কাব্যালোক আনন্দের সারৎসার এবং উচ্ছলতা-উৎফুল্লে নৃত্যরত হলো। স্বর্গ থেকে ধরিত্রী পর্যন্ত উপাদান সঙ্গীতে সমৃদ্ধ হলো।’ সূত্র : উইকিপিডিয়া।
বৈচিত্র্যময় কর্মবহুল জীবনে সৈয়দ আলী আহসান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। বিশ্ব সাহিত্যের পরিম-লেও তার অবদান অনস্বকীর্য। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে যেমন সরকারিভাবে স্বীকৃত, তেমনি সরকারের বিভিন্ন অনুবাদ-বিষয়ক বিভাগে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বেও ছিল তার ঈর্ষণীয় পরিচিতি। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখেন।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘চেনাকণ্ঠ’ ছদ্মনামে লিখতেন। লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।
সৈয়দ আলী আহসানের গ্রন্থসংখ্যা অনেক। যেমন কাব্যগ্রন্থ : ‘অনেক আকাশ (১৯৬০), একক সন্ধ্যায় বসন্ত (১৯৬২), সহসা সচকিত (১৯৬৮), উচ্চারণ (১৯৬৮), আমার প্রতিদিনের শব্দ (১৯৭৩), প্রেম যেখানে সর্বস্ব, নির্বাচিত কবিতা। প্রবন্ধ গ্রন্থ : বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান সম্পাদিত (১৯৫৬), কবিতা কথা (১৯৫৭), কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা (১৯৬৮), আধুনিক বাংলা কবিতা : শব্দের অনুষঙ্গে (১৯৭০), রবীন্দ্রনাথ : কাব্য বিচারের ভূমিকা (১৯৭৩), মধুসূদন : কবিকৃতি ও কাব্যাদর্শ (১৯৭৬), যখন কলকাতায় ছিলাম (২০০৪), বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস মধ্যযুগ, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, জীবনের শিলান্যাস। সম্পাদিত গ্রন্থ : পদ্মাবতী (১৯৬৮), মধুমালতী (১৯৭১)। অনূদিত গ্রন্থ : ইকবালের কবিতা (১৯৫২), প্রেমের কবিতা (১৯৬০), ইতিহাস (১৯৬৮)। ইসলামি গ্রন্থ : মহানবী, আল্লাহ আমার প্রভু। অন্যান্য গ্রন্থ : যখন সময় এল, রক্তাক্ত বাংলা, পা-ুলিপি, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, রজনীগন্ধা চর্যা-গীতিকা, বাংলাদেশের সংস্কৃতি। এ ছাড়া বাড পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত : আমাদের আত্মপরিচয় এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বঙ্গবন্ধুকে যেমন দেখেছি, বাংলাদেশ ১৯৭৫, আল্লাহর অস্তিত্ব, আমার সাক্ষ্য এবং আমার পছন্দ : দেশ-বিদেশের রান্না ইত্যাদি।
আরমানিটোলা স্কুলে অধ্যয়নকালে স্কুল ম্যাগাজিনে ‘দি রোজ’ নামে তার ইংরেজি কবিতা ছাপা হয়। অতঃপর কলকাতার দৈনিক আজাদ, মোহাম্মদী ও সওগাত পত্রিকায় বাংলা ভাষায় গল্প, কবিতাসহ অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নকালীন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পরিচয় পত্রিকায় ‘কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত’ শীর্ষক তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন আদর্শ নির্মাতা। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রবর্তক হিসেবেও তার সুখ্যাতি আছে। কাব্যাদর্শে তিনি টিএস ইলিয়ট ও আইরিশ রিভাইভালের চিন্তাধারা, বাংলা পুঁথিসাহিত্য ও মুসলিম ঐতিহ্যে লালিত বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনের অগ্রনায়ক। বাংলা কাব্যচিন্তায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশসহ বাংলা সাহিত্যের উচ্চমার্গের কবিদের আদর্শে সৈয়দ আলী আহসানের সাহিত্যপ্রতিভার আরও বেশি উন্নয়ন ঘটে। তাদের সাহিত্যদর্শনের অনেক স্বাক্ষর তার লেখনীর মধ্যে পাওয়া যায়।
সাহিত্যের সকল শাখায় সৈয়দ আলী আহসানের বিচরণ ছিল। সাহিত্য রচনায় শব্দের নিপুণ সন্নিবেশনে তার ছিল চৌকস মননশীলতা। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতায় তার লেখাগুলো পাঠককে আন্দোলিত ও পুলকিত করে তুলত। কবিতায় হৃদয় ও মনের সকল অনুভূতি ও অনুভবের স্বতঃসিদ্ধ প্রকাশভঙ্গিমায় এক বিশুদ্ধ শব্দের জমিন তৈরি করায় তিনি ছিলেন একজন চৌকস কারিগর। শব্দের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের একটি বিরাট ভুবন সৃষ্টি করেছেন। ছন্দের তালে তালে ঝংকৃত তার কবিতাসমূহ যেন একেকটি প্রাসাদ। তিনি মাতৃভূমিকে নিয়ে অনেক লিখেছেন। এর মধ্যে প্রবলতর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে তার বিভিন্ন কবিতায়।
মাতৃভূমির স্নিগ্ধতা ও মনোমুগ্ধকর রূপ-সৌন্দর্যে তিনটি পর্বে লিখেছেন বিখ্যাত কবিতা ‘আমার পূর্ববাংলা’। এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। স্বদেশ ও মাতৃভূমি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি তার সকল অনুভব ও অনুভূতি দিয়ে মাতৃভূমির ছায়াস্নিগ্ধ সৌন্দর্যকে প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন :
‘আমার পূর্ব-বাংলা আশ্চর্য
শীতল নদী
অনেক শান্ত আবার সহসা
স্ফীত প্রাচুর্যে আন্দোলিতৃ’
২. আমার পূর্ব-বাংলা একগুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতো
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি
আমার পূর্ব-বাংলা বর্ষার অন্ধকারের অনুরাগৃ’
‘আমার পূর্ব বাংলা’ নামক কবিতাটি একসময় কলেজের বাংলা বিভাগের পাঠ্যসূচিতে সিলেবাসভুক্ত ছিল।
সৈয়দ আলী আহসান মূলত কবি। কবিতার শক্তিমত্তার মধ্য থেকেই তিনি সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণ করেছেন। তার কবিতায় অপার মুগ্ধতা আছে। আছে প্রেম ও ভালোবাসা। বাংলার রূপ সুন্দর মোহময়তার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর রূপকে নানান অবয়বে তিনি আবিষ্কার করার চেষ্টা এবং নিজের সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে তার বর্ণনা করেছেন। তেমনি মানুষের সৌন্দর্যবোধও তাকে মুগ্ধ করেছে। প্রকৃতির মধ্যে, যেমন নদী, মৃত্তিকার বহুরূপের ছড়ানো সৌন্দর্যে তিনি একজন খাঁটি প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সমুদ্রের কল্লোল, নদী, উপত্যকা, প্রান্তর, আকাশ নীলিমা, সবুজ-শ্যামল সৌন্দর্যের ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজিতে যেমন মুগ্ধতা ছড়ায়, তেমনি নারীর মোহনীয় আকর্ষণেও তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। আবিষ্ট হয়েছেন। নারীকে দেখেছেন মুগ্ধতার প্রতীকরূপে। আনন্দধারার আসল উৎসে তিনি নারীর সৌন্দর্যে হয়েছেন বিমোহিত। নারীর পদচারণ ও স্পর্শ নিয়ে আসে মুগ্ধতা এবং অনাবিল সুখ ও আনন্দ। সেসব আনন্দের কথা বর্ণনা করে নিয়ে তার কয়েকটি কবিতাও আছে। একটি কবিতার লাইন এমন :
‘তুমি যখন হাঁটতে থাকো বারান্দাতে
বারান্দা হয় ফুলের বাগান
হয়তো ফুলের পরাগরেণু।
তুমি যখন চুল খুলে দাও আচম্বিতে
তোমার চুলের গুচ্ছগুলো
মৃগনাভীর গন্ধ ছড়ায় ইতস্তত।’
সৈয়দ আলী আহসানের সাহিত্যাদর্শের এত ব্যাপকতা থাকার পরও একশ্রেণির লোক তাকে রবীন্দ্রবিরোধী হিসেবে তার সমালোচনা করেন। অথচ তার সাহিত্যের মূলে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের প্রতি ছিল অগাধ টান ও ভালোবাসা। অনেক লেখায় তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কথা বারবার উচ্চারণ করেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি গ্রন্থও লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় হৃদয়দুয়ার খুলে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি তোমার মতো নিষ্কলুষ নই।’ তিনি লিখেছেন :
‘আমার কথার উপর কথা
সাজিয়ে চলার পৃথিবীতে
তুমি শেষহীন আকাশ
এবং অনেক সজীবতায় হৃদয়ের নীলাম্বর।’
তেমনি অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় তিনি ছোটদের উদ্দেশে লিখেছেন :
‘যে ভাষা তোমরা পড়ছো এখন
যে ভাষায় কথা সকলে বলে
সে ভাষার কবি রবীন্দ্রনাথ
যেন সূর্যের দীপ্তি জ্বলে।’
পৃথিবীর সৌন্দর্যবোধ ও সকল স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে তিনি পৃথিবীর আলো-বাতাস ও সত্য সুন্দরতর উজ্জ্বল দীপ্তির আশা করে লেখেন:
‘পৃথিবীতে থাকবে পথচারীর মতো-
শুধু গন্তব্যস্থানের দিকে অগ্রসর হবে
কিন্তু কখনও থামবে না,
কেননা তুমি তো অতিথি-
তোমার তো বাসস্থান নেই।
যখন সন্ধ্যা হবে
প্রত্যুষের জন্য অপেক্ষা করো না
যখন সকাল হবে
তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করো না
জীবনকে ইচ্ছে করো
মৃত্যুকে ইচ্ছে করো না-’
তিনি অধ্যাপক ছিলেন, প-িত ও বুদ্ধিজীবী ছিলেন। শিল্পসাহিত্যে তার রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান। তার ভেতর ধর্মবোধ যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিশ্বাসের দৃঢ়তা। এই দুই ধরনের আলোকদীপ্তির মাধ্যমে তিনি আসল পথের সন্ধান করেছেন। জীবনের একটি সময়ে মহামহিম স্রষ্টার অপরূপ অস্তিত্বের কথা তার অপকট উচ্চারণে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে বারবার। সাহিত্যচর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষকতা এবং কর্মজীবনের সকল দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবোধ ও সত্যচারিতা ছিল তার জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
পুরস্কার ও সম্মাননা : বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৬৮, দাউদ পুরস্কার (১৯৬৯) স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক্কালে প্রত্যাখ্যান। শেরেবাংলা পুরস্কার, সুফি মোতাহার হোসেন স্বর্ণপদক ১৯৭৬। একুশে পদক ১৯৮২। নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক ১৯৮০, মধুসুদন পুরস্কার ১৯৮৫। স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৮৭, জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্তি ১৯৮৯, কিশোরকণ্ঠ পুরস্কার (মরণোত্তর ২০০৩)। ২০০২ সালের ২৫ জুলাই বাংলা সাহিত্যের এই মহামানব পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে চলে যান। তার জীবনে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাহিত করা হয়।
তিক্ত হলেও এটা সত্য যে, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বিস্মৃতিপরায়ণ। কারো অবদানের কথা সহজেই ভুলে যাই। এমনকি কাকে ভুলে যাওয়া উচিত, কাকে নয়, তা-ও জানি না। তবু প্রত্যাশা, বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের মতো মহামানবদের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক । ( গত ২৫ জুলাই সৈয়দ আলী আহসানের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে লিখিত)