সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

আয়ু বাড়ানোর যন্ত্র আসছে!

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২

আর কোন চিন্তা নেই। ম্যানিনজাইটিস, পার্কিনসন, আলঝেইমার এমনকি ক্যান্সার। সব ভালো হয়ে যাবে। ১৫০ বছরের অধিক গড় আয়ু হবে মানুষের। সেই প্রযুক্তি এখন মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্নায়ু শল্য চিকিৎসা বিজ্ঞানী গেরি হেইট আবিষ্কার করে ফেলেছেন এই বায়োচিপ।
কেমন চিপ? সিলিকন প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে জীবদেহের আনুষঙ্গিক বস্তুকণা। অর্থাৎ হার্ডওয়্যারের সঙ্গে নরম কোষকলার সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। এই চিপ মস্তিষ্কে স্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায় পার্কিনসন বা কম্পন রোগ।
বিজ্ঞানী হেইট এটি পরীক্ষা করেছেন সাইবর্জ নামে জনৈক রোগীর মস্তিষ্কে। ৭৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি শার্টের বোতাম খুলতে এবং লাগাতে পারতেন না। এখন তিনি দিব্যি তা লাগাতে পারছেন। নিজে নিজে আপন মনে সব কিছুই করতে পারছেন। ১৫ বছর পর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। বিজ্ঞানী গেরি হেইট বলেন, যাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অকেজো, কিংবা দূর্বল হয়ে গেছে। এমন একটি সিলিকন চিপ তাদের মস্তিষ্কে বসানোর সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে পাচ্ছে নব জীবনের প্রাণ-চাঞ্চল্য। এখন দরকার কেবল পর্যাপ্ত টাকা-কড়ি। একজন মানুষের মগজে এই চিপ স্থাপন করতে ২০ হাজার ডলার খরচ পড়বে। তবে এতে রোগীর জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে, সে তুলনায় অর্থটা খুব অল্পই বলা চলে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই চিপ আসলে সুবিন্যস্ত এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর। যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে। আকস্মিক শক্তি বা বেগকে বৈদ্যুতিক কমান্ডে রূপান্তর করে। স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত এর ইলেকট্রিক কমান্ড শরীরের মাংসপেশীকে কার্যকরভাবে উদ্দীপ্ত ও প্রভাবিত করে। রোগী চলৎশক্তি ফিরে পায়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে এই প্রাণ প্রযুক্তি গবেষণার বাস্তব পরীক্ষা হয়েছে। এখন এটি খুব সহজে বাণিজ্যিক প্রসারতাও পেতে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন চিপস গবেষণা কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে দেখা যায়-এই ক্ষুদ্র চিপ ডিএনএ থেকে ক্যানসার কোষ বিচ্ছিন্ন করতে পারে। যার ফলে খুব সহজে, দ্রুত গতিতে এবং নিখুঁতভাবে নিরাময় সম্ভব মেনিনজাইটিস এর মতো ভয়ানক রোগ।
এই চিপ ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষকলা এবং ইন্দ্রিয় অঙ্গ নতুন করে সৃষ্টি করে। দেখতে মুচমুচে পাতলা বিস্কুটের মতো। তবে এতটাই ছোট যে কড়ে আঙ্গুলের আগায় রাখা যায়। এই চিপটিই প্রাণের রাসায়নিক পরিবর্তন সমূহের পূঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সরবরাহ করে। প্রকাশ করে জেনেটিক কোড। আর তাতেই নিরাময় করা সম্ভব হবে ক্যান্সারের মত জটিল জটিল রোগ।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবারনেটিকস প্রফেসর কেভিন ওয়ার উইক এরই মধ্যে হাতে বসিয়েছেন এই মাইক্রোচিপ। এই চিপে আছে সম্প্রচার যন্ত্র। রিডিং ক্যাম্পাসে তার হাঁটাচলার সময় স্বয়ক্রিয়ভাবে তার কক্ষের দরজা খুলে যাচ্ছে। কম্পিউটারও জানান দিচ্ছে প্রফেসরের উপস্থিতির কথা। তবে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে ইচ্ছুকদের অবশ্যই সার্জনের অনুমতি নিতে হবে। কারণ মানুষকে তো আর প্রযুক্তির দাস হতে দেয়া যায় না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়েইনফরমেটিকস অধ্যাপক ওয়াল্টার গিলবার্ট বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই আমরা পার্সোনাল ডিএন এর অনুক্রম অ্যান্ড্রয়েড গেজেটে ধারণ করে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। যা রোগ নির্ণয় করবে। রোগ নিরাময়ে কি করতে হবে তা অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাৎলে দেবে সঙ্গে সঙ্গে।’ তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন- ধরা যাক, হঠাৎ দেখা গেলো, কারো মস্তিষ্কের নিউরন ঠিকঠাক মত সাড়া দিতে পারছে না। তার মানে হার্ট যেভাবে পাম্প হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এই চিপে থাকা কৃত্রিম নিউরন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঙ্গে সঙ্গে সঠিক সংকেত প্রেরণ করে। আর এতে হার্ট ফেইল রুখে দেয়। অর্থাৎ পুনরায় হার্ট তার সঠিক ছন্দ পথ খুঁজে পায়। এভাবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আর থাকবে না। আর তখন মানুষের আয়ু বেড়ে যাবে ১৫০ বছরের বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে ব্যাপক আকারে তৈরি হচ্ছে এই মাইক্রোচিপ। এজন্য সিলিকন চিপ কারখানা স্থাপিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগ এরই মধ্যে ‘মটোরোলা’র সঙ্গে এই চিপ উৎপাদনে চুক্তি সম্পাদন করেছে। চীন-রাশিয়া নয়, হয়তো আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণ করবে এই লাভজনক জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যগত অবকাঠামোর ভবিষ্যত বাজার।-জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com