রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মৃত্যু হওয়া রুম্মন শেখ সুমনের (২৭) লাশ অবশেষে গ্রহণ করেছে তার পরিবার। পুলিশ একে আত্মহত্যা বললেও পরিবার বলছিল তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সুমনের লাশ হাসপাতাল মর্গের হিমঘর থেকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সুমনের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের হিমঘর থেকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে। সুমনের পরিবারের দাবি, সুমন শেখ রাজধানীর রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন কার্যালয়ে ছয় বছর ধরে চাকরি করছিলেন। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দিবাগত রাতে বাসা থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। আটকের খবর পেয়ে রাতেই সুমনের পরিবার থানায় যায়। এ সময় তাদের জানানো হয়, শনিবার সকালে সুমনকে আদালতে পাঠানো হবে। সকালে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে সুমনের মৃত্যুর কথা জানায় পুলিশ। পরদিন শনিবার (২০ আগস্ট) সুমন শেখের স্ত্রী জান্নাতের বড় ভাই মোশাররফ হোসেন জানান, সুমনের লাশ নিতে হাতিরঝিল থানা থেকে তাদের পাঠানো হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সেখানে রাত ৮টার পর লাশ গোপনে নিয়ে যেতে বলে পুলিশ। কিন্তু তারা লাশ নেননি। বলেন, রোববার সকালে এ ঘটনায় ইউনিলিভারের পিওরইট কোম্পানি ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। মামলা দায়েরের পর পরিবার লাশ বুঝে নেবে। এ কথা বলে তারা লাশ না নিয়ে বাসায় চলে যান। পরিবারের দাবি, সুমনকে মারধর করে মারা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশের দাবি, চুরির মামলার আসামি সুমন থানা হাজতের ভেতর আত্মহত্যা করেছে। ডিসি আজিমুল জানান, গত ১৫ আগস্ট ইউনিলিভারের পিউরইট কোম্পানি থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলার পর তিনজনকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। গ্রেফতার তিনজন হলেন- আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন। তারা এখন কারাগারে আছেন। ওই তিনজনের জিজ্ঞাসাবাদ ও চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রুম্মন শেখকে শনাক্ত করা হয়। এরপর শুক্রবার বিকেলে রামপুরা মহানগর এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় রুম্মন শেখকে। তার বাসা থেকে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযান শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়।
ডিসি আরো জানান, শনিবার সকালে রুম্মন শেখকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে রুম্মন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে লোহার গ্রিলের সাথে গলায় ফাঁস দেয়। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এ ফুটেজ নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।
ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন ডিউটি অফিসার হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো: জাকারিয়া।