ভালোবাসা মানে বিশ্বাস, ভরসা, শক্তি, সাহস, অনুপ্রেরণা। ভালোবাসা মানে উৎসাহ, উচ্ছাস, উন্মাদনা। ভালোবাসার এমন আরো অসংখ্য মানে আছে, আছে আরো কতো শত উপাদান। ভালোবাসা হলো আবেগে মোড়ানো এক অনুভূতির নাম। যেই আবেগে মানুষ জয় করতে পারে অসমুদ্র হিমাচল। সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে, সব ক্লান্তি ভুলে প্রিয়জনের ভালোলাগায় নিজেকে সঁপে দেয়ার নামই ভালোবাসা।
ভালোবাসার কোনো রঙ হয় না, ভালোবাসার মানে কখনো ফুরোয় না। ভালোবাসা এক মায়াবী ক্যানভাস। সে ক্যানভাসে যে শিল্পী যে রঙে-রূপে চিত্র অঙ্কন করেন, ‘ভালোবাসা’ সে রঙে-রূপেই উজ্জ্বল হয়ে আভা ছড়ায়। অনুভূতি জাগায়। আর এ অনুভূতি জাগায় বলেই ‘ভালোবাসা’ ধরা দেয় একেকজনের কাছে একেক রঙে। ভালোবাসাকে যে রঙে আঁকবেন ‘ভালোবাসা’ সে রঙেই ধরা দেয়। ভালোবাসা মানে কেবল কারো প্রেমে পড়া নয়, ভালোবাসা মানে নতুন করে ভিন্ন উদ্যমে জেগে ওঠা, ভালোবাসা মানে ঘুরে দাঁড়ানো, জীবনকে নতুন করে সাজানোও বটে। ঘুরেফিরে ভালোবাসা মানে সেই বিশ্বাস, ভরসা, শক্তি, সাহস, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা। আর ভালোবাসার এই সব ক‘টার মানে সতীর্থরা খুঁজে পেয়েছে সাকিব আল হাসানের মাঝে। তাইতো তারা তাকে এতো বেশি ভালোবাসে।
নানান সময়ে নানা তর্কে-বিতর্কে আলোচিত, সমালোচিত হয়েছেন সাকিব। কখনো তিরস্কৃত হয়েছেন, কখনো নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন। তবে বরাবরই সতীর্থদের সাথে পেয়েছেন। কারণ, তারা সাকিবকে ভালোবাসেন। আর এই ভালোবাসা এমনি এমনিই আসেনি, এই ভালোবাসা সাকিব অর্জন করে নিয়েছেন। তরুণ ক্রিকেটারদের তিনি যেভাবে আগলে রাখেন, ভালোবাসেন, স্নেহ করেন; তার বিপরীতেই তো এমন প্রতিদান পাচ্ছেন। সেদিন সাব্বির রহমান বললেন, এর আগে সাইফুদ্দীনও বলেছেন, বলেছিলেন নাসির হোসেনও। দলে আছেন কিংবা দল থেকে দূরে, সাকিব আল হাসান খোঁজ নেন, খবর রাখেন শত ব্যস্ততার ভিড়ে। নানা কথায় নানাভাবে দেখিয়ে দেন, পরামর্শ দেন, অনুপ্রেরণা দেন, উদ্যম জাগিয়ে দেন। এই ক’জনের বক্তব্য তো শুধু প্রকাশ্যে এসেছে, আরো কতো গল্প হয়তো আছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।
সুযোগ পেলেই তারা ঘিরে ধরেন তাকে। এইতো সেদিন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, সাকিব আসতেই মাঠে তরুণেরা দল ছেড়ে ছুটে আসলেন তার কাছে। বসে গেলেন তাকে ঘিরে। আর সাকিব, এমনভাবে মিশে গেলেন তাদের সাথে, কে বলবে এই সাকিবের বয়স ৩৫ পেরিয়েছে! হাসি-ঠাট্টা, আড্ডা-খুনসুটি; সাকিবে নেই কোনো বাধা, নেই বয়সের ধাঁধা। সাকিবের প্রতি ভালোবাসা এতোটাই যে, এক সাবেক ক্রিকেটার ও বোর্ড পরিচালক তো বলেই দিলেন ‘তরুণ ক্রিকেটারদের পছন্দের শীর্ষে সাকিব, ১০ ভোটের ৯টিই যাবে তার ঘরে!’ মাত্র ৩ দিন আগে দলে যোগ দেয়া নতুন কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামও যেন বিষয়টা বুঝে গেছেন। গতকাল প্রথম সংবাদ সম্মেলন ছিলো তার, যেখানে বলেন-,‘তরুণদের নিয়ে সাকিবের ভাবনা দুর্দান্ত। তরুণেরা তাকে অনুসরণ করে, সম্মান করে। তার কাছে সহজেই যাওয়া যায়। এটা অনন্য একটা মিশ্রণÍযেখানে সম্মানও থাকে, চাইলেই তার সাথে মেশা যায়। অধিনায়ক এবং দলের দারুণ একটা সমন্বয়।
সাকিব দলে ফিরতেই, বলা চলে অধিনায়কত্ব পেতেই যেন দলটা বদলে গেছে, নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে, একটা ভিন্ন উদ্যম যোগ হয়েছে৷ আমরা পারি, আমরা পারবো বিশ্বাস এসেছে। জানা নেই এশিয়াকাপে দল কেমন করবে, হয়তো ব্যর্থই হবে। হওয়াটা স্বাভাবিকও বটে, হঠাৎই তো আর সব বদলে ফেলা যায় না। সাকিব নিজেও বলেছেন, যারা এমন ভাবেন, তারা আছেন বোকার স্বর্গে। সাকিবের ভাষ্যে, শিশুদের মতো করে আগে হাঁটতে শিখতে হবে, তবেই তো একটা সময় দৌড়ানো যাবে। তবে তরুণরা যে নিজেদের সেরাটা দেয়ায় দৃঢ় প্রত্যয়ী তা বলাই চলে, দেখিয়ে দেয়ার প্রবল বিশ্বাস এখন তাদের ভেতরে। সাকিবের জন্য হলেও তারা জিততে চাইবে, সাকিবের মুখে হাসি দেখবে বলে তারা লড়ে যাবে। প্রেমিকার হাসিমুখ প্রতিটি প্রেমিকের জন্যই তো স্বপ্নীল সুখই বটে। যাহোক, তরুণেরা চাইবে বিশেষ কিছু করতে, প্রিয় সাকিবকে একটা শিরোপা উপহার দিতে। তারা বিশ্বাস করেন, যেই সাকিব দেশের ক্রিকেটকে এতো কিছু দিয়েছেন, সেই সাকিব একটা শিরোপা প্রাপ্যই তো বটে।
কতোটা পারবেন জানা নেই, দৌড়টা কতদূর হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। তবে তরুণেরা সাকিবের জন্য হলেও লড়ে যাবে, নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেবে, তা বিশ্বাস করি নিঃসন্দেহে। যেমনটা লিওনেল মেসির জন্য সতীর্থরা করেছিলেন। তাকে একটা শিরোপা উপহার দিতে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আশা রাখি, দিবালা-ডি মারিয়ার মতো মিরাজ, মোসাদ্দেক, বিজয়রাও নিজেদের সেরাটা দিয়ে একটা শিরোপা লাল-সবুজ রঙে রাঙাবেন।