ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) এর প্রতি ঈমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন। তাওহিদের পরে মুমিনদের যে ব্যাপাওে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেয়া হয়েছে তা হলো ঐক্যবদ্ধতা। ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করা মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। এককভাবে জীবনযাপন আল্লাহর অপছন্দ। সংঘবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনা করা ইসলামের নির্দেশনা। এ সর্ম্পকে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন-‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। (সূরা ইমরান : ১০৩)। ঐক্য সম্পর্কে রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, তোমরা সেইসব লোকদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা আল ইমরান : ১০৫) । আল্লাহ আরও বলেন-‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, সালাত কায়েম করো এবং কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত’। (সূরা তাওবাহ : ৩১-৩২)। মহান অল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই’। (সূরা হুজরাত: ১০)। মহান পালনকর্তা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তাদের বেশি ভালোবাসি যারা আল্লাহর রাস্তায় এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, ঠিক যেন শিষাঢালা এক সুদৃঢ় প্রাচীর’। (সূরা সফ : ৬১)।
হজরত হারিছ আল আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে, সংঘবদ্ধ, আমিরের নির্দেশ শ্রবণ, নির্দেশ পালন, হিজরত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেছে সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) সালাম কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও? এর উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, নামাজ কায়েম এবং রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও। (তিরমিজি : ২৭৯০)। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.( থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে’। (তিরমিজি : ১১২৬)। রাসূলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করো, সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করো না, কারণ বিচ্ছিন্ন হলে শয়তানের কুপ্ররোচণায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে’। (আবু দাউদ ২৬১৭)। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-‘মুমিনগণ অপর মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলে প্রবিষ্ট করেন’। (বুখারি: ৩১২১)। হজরত ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। (মুসলিম : ৫২৯২)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, ‘তিনজন লোক কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকলেও একজনকে আমির না বানিয়ে থাকা জায়েজ নয়’। (আহমদ আল মুসনাদ : ৬৩৬০)। মুসলিম জাতিক প্রাণ, এক দেহ, এই চেতনাবোধ ক্ষীণতর হয়ে আসছে। ইসলামে মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এ সম্পর্কের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ভের সাথে সম্পৃক্ত। যে কেউ তার স্বীকৃতি দেবে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) জোর তাগিদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ আমাদের ঐক্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন।
লেখক : প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার
ahsanbinmujahir@gmail.com