প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর থেকে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তার বাদ পড়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের তালিকায় নাম থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে গত রাতে (রোববার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদ পড়ায় তারাও অবাক হয়েছেন। তারা ধারণা করছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। এই বিষয়গুলো অন্যতম কারণ হতে পারে। সর্বশেষ গত মাসে চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তার এই মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য বাংলাদেশ এবং ভারত- দুই দেশকেই অস্বস্তিতে ফেলেছিল। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, শীর্ষ বৈঠকে এই অস্বস্তি এড়াতে সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদ পড়ে থাকতে পারেন। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আব্দুল মোমেন অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারত সফরে যাননি। কিন্তু রোববার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সফরের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে তিনি নিজেও ভারত সফরে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের যে তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল, সেই তালিকাতেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ছিল বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। তিনি যে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন, তা প্রকাশ হয় সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই সফরে রয়েছেন। চারদিনের এই ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের যে বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক ;গত মাসে চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তৃতায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি তিনি দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করেছেন। ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি যে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছিলেন যে, ‘আজকে অনেকের বক্তব্য এসেছে যে শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে (শেখ হাসিনা) টিকিয়ে রাখলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে। আমাদের দেশ সত্যিকারভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ হবে।’ ‘সেজন্য শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করার দরকার, ভারতবর্ষ সরকারকে আমি সেই সেই অনুরোধ করেছি,’ বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। আাগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ বলে মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এছাড়া এর অনেক আগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে তুলনা করেছিলেন। তখনো তার মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল। সূত্র : বিবিসি