পাকিস্তান ক্রিকেটের এক মহাস্তম্ভ তিনি, ভূমিকাটা ঐতিহাসিক চীনের প্রাচীরের মতো দুর্ভেদ্য-দুর্বার। পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম কান্ডারি তিনি, চাঁদ-তারার নির্ভীক ঝা-াবাহী। কীর্তিমানদের বিদায়ে পাকিস্তান ক্রিকেট যখন দোলাচালে, ঐতিহ্য যখন বিবর্ণ খোলসে, তখন খোলস পাল্টে ফের রঙিন স্বপ্ন বুনতে বাবর আজমের সারথি হয়ে ছড়িয়েছেন দীপ্তি। যেন সম্রাট বাবরের মহান সেনাপতি। সেনাপতি মোহাম্মদ রিজওয়ান। আজ যে বর্ণিল রিজওয়ানকে দেখছেন, যে রিজওয়ানের রঙে রঙিন হয়ে আছেন, তার মাদকতায় মুগ্ধ হয়ে আছেন, নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন, তবে সেদিন এই রিজওয়ান এত বর্ণিল ছিলো না, ছিলেন না এমন রঙিন চরিত্র। রান বিলাসী তো বহু দূর, রিজওয়ান ছিলেন মলিন, রুগ্ন। কতটা আঁধারচ্ছন্ন ছিল তার ক্যারিয়ার, তা খুঁজে পাওয়া যায় পরিসংখ্যানে…
২৪ এপ্রিল ২০১৫। শেরে বাংলায় প্রথমবার জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি একাদশে রিজওয়ান। একাদশে থাকলেও ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়নি, ওই ম্যাচটাও হেরে যায় পাকিস্তান। ঠিক এক মাস পর গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মাঠে নামেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, তবে ফেরেন মাত্র ৬ রানে। পরের ৮ ইনিংস মিলিয়ে প্রথম ১০ টি-টোয়েন্টিতে করেছিলেন মোটে ১০৬ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৩।
ফলে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর ফের টি-টোয়েন্টিতে ফিরেন ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এর মাঝে কেটে গেছে তিনটি বছর। দীর্ঘ এই সময়েও কাটেনি তার আকাশের মেঘ। ফলাফল ফের ব্যর্থ। তবে এবার আর ছুঁড়ে ফেলা হয়নি, সফরাজ আহমেদের সর্বনাশে, রিজওয়ানের পৌষমাস হাসে।
দলে নিয়মিত সুযোগ মেললেও ব্যাটে মিলছিল না রান। প্রত্যাবর্তনের পর আরো ১৫ ম্যাচ খেলে করেন মোটে ১১৮ রান। এর মাঝে বাবর আজমের চোটে শেষ দুই ম্যাচ অধিনায়কত্বও করে ফেলেন কিউইদের বিপক্ষে। তবে তৃতীয় ম্যাচটা ছিল নতুন আলোয় নতুন দিনের। মেঘ কেটে হেসে উঠা রোদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ বলে খেলেন ৮৯ রানের এক ইনিংস। আগের ২৫ ম্যাচের মোট রানের প্রায় ৫০ ভাগ এই এক ইনিংসে! পরের গল্পটা এক ভিন্ন রিজওয়ানের । যে রিজওয়ান কখনো খেলতেন ৮ নম্বরে, কখনো ৯ নম্বরে, সেই রিজওয়ানের পুরোদস্তুর ওপেনার হয়ে যাওয়ার শুরু গল্প ছিল তা। অতঃপর দেশে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শতক যেন তার পূর্ণতা। বদলে যাওয়া রিজওয়ানের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আজকের এই রূপ, বাবরের আলোয় রিজওয়ান আজও হেসে যায় নিশ্চুপ। চলমান এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তিন ম্যাচে ৯৬ গড়ে, ১২৮ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১৯২ রান। ভারতের বিপক্ষে রোববার রাতের ঐতিহাসিক জয়ের রূপকারও তিনি, মুগ্ধতার কালিতে সবুজের ক্যানভাসে এঁকেছেন বিজয়ের প্রতিচ্ছবি। হয়তো আসর শেষে সর্বোচ্চ রানের পুরস্কারটাও যাবেন জিতে, ১৫৪ রান নিয়ে ভারতীয় বিরাট কোহলি আছেন দ্বিতীয় স্থানে । এখন দেখার বিষয়, রিজওয়ান কি পারবেন বাকি ম্যাচগুলোতেও তাঁর আলোয় সাজাতে…