ধূমপান বর্তমান যুগের বড় সমস্যাগুলোর একটি। ধূমপানের ফলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে। ধূমপায়ীরা ধীরে ধীরে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপান তাদের অন্তর দুর্বল ও শক্তি ক্ষয় করে দিচ্ছে। ধূমপান ‘নীরব ঘাতক’ এ ব্যাপারে এখন কারো দ্বিমত নেই। যারা মৃত্যুশ্বাস ধূমপান গ্রহণ করেন তাদের অবশ্যই নীরব ঘাতক ধূমপান বা তামাক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ ধূমপান তাদেরকে ধীরে ধীরে কবরে নিয়ে যাচ্ছে বা রোগ-শোকের দুঃষহ ও অভিশপ্ত জীবন বয়ে আনছে তাদের জন্য। অধূমপায়ীদের জন্য শুভ বার্তা যে, আল্লাহ তাদের ধূমপানের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন।
শরিয়তের দৃষ্টিতে ধূমপান : ধূমপায়ীরা সাধারণত এ কথা বলে যে, কুরআন ও হাদিসে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। অথচ কুরআনের একাধিক আয়াত ও হাদিসের একাধিক ভাষ্য মতে প্রমাণিত হয়, ধূমপান নিষিদ্ধ। কারণ ধূমপানের কারণে নানা ধরনের প্রাণনাশী রোগব্যাধি হয়ে থাকে। তাছাড়া বিড়ি ও সিগারেটের প্যাকেটেও লেখা থাকে ‘ধূমপান মৃত্যু ঘটায়’ যা একটি সুস্থ জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না’ (সূরা বাকারাহ-১৯৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেরাই নিজেদের হত্যা করো না’ (সূরা নিসা-২৯)। ওই আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আর জেনেশুনে ধূমপান করা মানে এক ধরনের আত্মহত্যা করা।
ধূমপান কুরআনে বর্ণিত নিষিদ্ধ খবিস বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। ধূমপানে রয়েছে বিভিন্ন রোগের উপাদান। আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর পবিত্র খাদ্য-পানীয় হালাল করেছেন। অপবিত্র ও খারাপ বস্তু তিনি বান্দার ওপর হারাম করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী বৈধ করা হয়েছে? বলো, তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সব ভালো বস্তু’ (সূরা মায়েদাহ : ৪, ৫)।
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা:-এর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও নিষেধ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে’ (সূরা আরাফ-১৫৭)। অতএব, সর্বপ্রকার ধূমপান খবিস বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ সব ধরনের নেশাদ্রব্য বিক্রি করা খবিস কর্মের অন্তর্ভুক্ত। তাই ধূমপানের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসায়-বাণিজ্য মদের মতোই হারাম।
তামাকদ্রব্য মাকরুহ না হারাম : মহান আল্লাহ তায়ালা সব খাদ্যদ্রব্যকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-১. হালাল; ২. হারাম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হালাল ও হারাম কখনো এক নয়’ (সূরা মায়েদাহ- ১০০)। এ মর্মে নুমান বিন বাশীর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু’ (বুখারি-৫২, মুসলিম-৩৯৮৯, তিরমিজি-১২০৫, আবু দাউদ-৩৩২৯)। অন্যত্র রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হলো, সে যেন হারামেই পতিত হলো’ (আবু দাউদ-৩৩৩০, ইবনে মাজাহ-৩৯৪৮)।
উল্লিøখিত কুরআন এবং হাদিসের দলিলে প্রতীয়মান হয়- বিড়ি, সিগারেট, তামাক, জর্দা হালাল নয়, বরং তা স্পষ্টই হারাম। এ মর্মে মহানবী সা: বলেন, ‘যাবতীয় নেশা সৃষ্টিকারী যাবতীয় বস্তু মাদক (খামার)। আর যাবতীয় নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম’ (মুসলিম-২০০৩, ইবনে মাজাহ-৩৩৯০, মিশকাত-৩৬৩৮)।
রাসূল সা: আরো বলেন, ‘যা অধিক সেবন করলে নেশার সৃষ্টি হয় তা কম সেবন করাও হারাম’ (তিরমিজি-১৮৬৫, আবু দাউদ-৩৬৮১)।
সুতরাং উপরোক্ত কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে বলা যায়, ধূমপান কোনোভাবেই হালাল হতে পারে না। এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া বিড়ি, সিগারেট পুষ্টিকর কিংবা ক্ষুধা নিবারণ করারও কিছুই নয়। জাহান্নামিদের খাবার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেন, ‘এটি তাদের পুষ্টিও জোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না’ (সূরা গাশিয়াহ-৭)। কুরআন ও হাদিসের উৎসারিত মূলনীতির আলোকে ধূমপান যে হারাম; তার মধ্য থেকে অন্যতম কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
মূলনীতি-১ ‘নিকৃষ্ট, খারাপ ও অপবিত্র বস্তু মুমিনদের জন্য নিষিদ্ধ’। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন- ‘তাদের জন্য উত্তম-উপাদেয় বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে আর হারাম করা হয়েছে নিকৃষ্ট, খারাপ বস্তুসমূহ’ (সূরা আরাফ-১৫৭)।
পৃথিবীর কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ স্বজ্ঞানে বিড়ি-সিগারেটকে উত্তম উপাদেয় বা উপকারী বস্তুর অন্তর্ভুক্ত করবেন না। বরং সর্বসম্মতিক্রমেই এটি নিকৃষ্ট, খারাপ ও অপবিত্র জিনিসের অন্তর্ভুক্ত। ( অসমাপ্ত)। লেখক : শিক্ষক, মাস্টার তালেব উল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বড়ঘোপ, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার