গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার ছোটশিমুলতলা গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের ছেলে আমিরজল পেঁপে চাষ করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন। তার সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরেজমিনে তাদের পেঁপে বাগানে গিয়ে দেখাযায়, সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতি গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য কাঁচা পেঁপে। থোকার মাঝে মাঝে দু’চারটি পাকা পেঁপেও ঝুলছে। দু’মাস ধরে গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষেই হচ্ছে না। পলাশবাড়ী পৌরসভার ছোট শিমুলতলা গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের ছেলে সফল পেঁপে চাষী আমিরজল বলেন, আমার ব?্যবসায় মন্দাভাব হওয়ায় ইউটিউব দেখে কৃষি কাজ সম্পর্কে ধারণা নেই। পাশাপাশি দেখি কোন ফসল আবাদে লাভজনক। এরপর পেঁপে চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রথম দু’বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করি। পেঁপের জাত নির্ণয় করতে না পেরে প্রথমে লোকশান হয়। এরপর পরের বছর ভালো জাতের পেঁপের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে পাঁচ বিঘা জমিতে পুনরায় পেঁপের চারা লাগাই। আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বলেন, পেঁপের চারা রোপনের সময় আশ্বিন এবং পৌষ মাস। বীজ বোনার ৪০ থেকে ৫০ দিন পর অর্থাৎ মাঘ-ফাগুন মাসে চারা রোপন করলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। চারা রোপনের পর সার ও প্রয়োজনমতো পানি দিতে হয়। খরা হলে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে। এরপর ইউরিয়া সার ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর দিতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুন করে দিতে হবে। চারা লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাসের মাথায় ফুল আসে, ফুল আসার ৩ থেকে ৪ মাস পর জমি থেকে পাঁকা পেঁপে বিক্রি করা যায়। আমি দু’মাস থেকে পেঁপে বিক্রি শুরু করে দিয়েছি।বিঘা প্রতি আমার খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি পেঁপে বিক্রি করে পাওয়া যায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। আমার সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি দেড় লাখের অধিক টাকা লাভ হয়। কৃষক আমিরজল এ ফসল আবাদ করে উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব পেঁপে চাষ করবো। আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে বতর্মানে ৬ লাখ টাকা ঘরে তুলেছি। আরো গাছে অনেক পেঁপে আছে। সেগুলোও আরো ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব। পেঁপে চাষে রোগ-বালাই বলতে ঢলে পড়া,কান্ড পঁচা, মোজাইক, ও পাতা কোঁকড়ানো রোগ অন?্যতম। এফসল দুই বছর ফল দেয়। এক প্রকার সাদা মশা-মাছি এর ক্ষতি করে। আমি পেঁপে চাষ করে প্রথম ছেলে আসাদুজ্জামান শুভকে ঢাকা কলেজে অর্থনীতিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করাচ্ছি। দ্বিতীয় সন্তান শাহরিয়ার জিসান ঢাকা রেসিডেন্সসিয়াল কলেজে ফাষ্ট ইয়ারে পড়ছে। আমিরজলের দেখাদেখি তার ভাই সাবেক মেম্বার আজিজুর রহমান ৩ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। পেঁপের ফলনও হয়েছে প্রচুর। পেঁপে চাষী আজিজুর রহমান জানান, চারা লাগানোর তিন মাসের মাথায় গাছে ফল ধরলেও তা ছিঁড়ে দেই। পরে আবার ফল ধরলে আট মাসের মাথায় গাছ থেকে পেঁপে তোলা শুরু করি। বাজারে কাঁচা পেঁপের চাইতে পাঁকা পেঁপের চাহিদা বেশি। দামও বেশ ভালো। তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে পাইকর এসে জমি থেকেই পেঁপে কিনে নিয়ে যান। শুনেছি তারা এসব পেঁপে ঢাকা আরদে বিক্রি করেন। আমি জমি থেকে প্রতি মন পেঁপে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি করি।