দেশে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদিত মাশরুম বিদেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাশরুম চাষ উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ৯৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন প্রকার মাশরুমের ২৫টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে চাষ ও সংরক্ষণ উপযোগী ২০টি টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে। একই সঙ্গে উচ্চ মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন এবং ৮০০ মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সারা দেশের যেসব স্থানে সম্ভাবনা রয়েছে সেসব এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্য দিয়ে মাশরুমের ব্যবহার বাড়বে। মানুষের পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানিয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে “মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ” শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি আগামী ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার যে সকল উপজেলায় মাশরুম চাষের সম্ভাবনা রয়েছে এমন ১৬০টি উপজেলা ও ১৫টি মেট্রোপলিটন থানা এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প গ্রহণের তিন উদ্দেশ্য হলো (১) বিভিন্ন প্রকার মাশরুমের ২৫টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে চাষ ও সংরক্ষণ উপযোগী ২০টি টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (২) উচ্চ মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ (৩) ৮০০ জন মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়ানো।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৯৫টি ছাদ প্রদর্শনী করা হবে। ৮০০টি স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। ৬০০ বর্গমিটার ডরমিটরি ভবন এক্সটেনশন করা হবে। ৪৫০ বর্গ মিটার ল্যাবরেটরি কাম অফিস ভবন এক্সটেনশন নির্মাণ করা হবে। ৯৫০ বর্গমিটার ওয়ার্কশপ কাম ল্যাবরেটরি ভবন, ১টি ইনকিউবেশন রুম (উপকরণসহ) নির্মাণ করা হবে। ৩৫টি ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিট নির্মাণ এবং ৫০০ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। ২৭ ব্যাচ উদ্যোক্তা, ৮০০ ব্যাচ দলভুক্ত চাষি, ১০০ ব্যাচ ছাদ বাগানি বা সাধারণ চাষি, ৮০০ ব্যাচ রিফ্রেশার, ২৯ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) ও উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা (এসএএইচও), ৭ ব্যাচ প্রশিক্ষক, ৯ ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তা, ৬ ব্যাচ জিও-এনজিও কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এবং ১৬০টি মাঠ দিবস, ৫টি মাশরুম মেলা ও ১৪ ব্যাচ উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রকল্পটির মাধ্যমে পুষ্টিকর, নিরাপদ ও উচ্চফলনশীল মাশরুমের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে এবং মাশরুমের উৎপাদনশীলতা বাড়বে, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত শস্য উপখাতের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন উপকরণের দক্ষ ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্পটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২ এ বর্ণিত টেকসই কৃষির প্রসার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৩ এ বর্ণিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সাথে সংগতিপূর্ণ বলেও মনে করে কমিশন।
একনেকে উপস্থাপনের প্রস্তাবনায় পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে উন্নত জাতের মাশরুমের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দেশে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদিত মাশরুম বিদেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এমন অবস্থায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক সম্পূর্ণ সরকারি (জিওবি) অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত “মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ” শীর্ষক প্রকল্পটি আটানব্বই কোটি চৌত্রিশ লাখ এগার হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক-এ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।