আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজার আগে সকল শ্রমিকের বকেয়া মজুরি (এরিয়ার) ও পূর্ণ উৎসব বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়েছে চা-শ্রমিক সংঘ। ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটির মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী ও যুগ্ম-আহবায়ক শ্যামল অলমিক বলেন- আগষ্ট মাসে দীর্ঘ ১৯ দিনের লাগাতার কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ, রাজপথ-রেলপথ অবরোধের মতো কঠিন সংগ্রামের পর গত ২৭ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০২১-২০২২ সাল মেয়াদের জন্য মজুরি ১৭০ টাকা হিসেবে বর্ধিত ৫০ টাকার (১৭০-১২০ টাকা) গত ২০ মাসের মজুরির এরিয়ার জনপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যে বাজারে ১৭০ টাকা মজুরি নিতান্তই কম। তারপরও চা-শ্রমিকরা যখন অধীর অপেক্ষায় বকেয়া মজুরির এরিয়ার টাকা এবং পূর্ণ উৎসব বোনাস পাওয়ার আশায় আছেন, তখন ১৬ সেপ্টেম্বর চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের পক্ষ থেকে এক দূরভিসন্ধিমূলক পত্র দিয়ে চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি থেকে বঞ্চিত করা ও উৎসাহ বোনাসকে উৎসব বোনাস হিসেবে চালিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের ঠকানোর তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। আর বরাবরের মতো মালিকদের স্বার্থরক্ষায় সহযোগিতার ভূমিকার পালন করছেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এমন কি আগামী জানুয়ারিতে যাতে চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করে মালিকপক্ষ পার পেয়ে যায় তারও দুরভিসন্ধি চলছে।
চা-সংসদের পত্রে উল্লেখ করা হয় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে ১৪ তম দরকষাকষির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্থায়ী শ্রমিকদের জন্য এ ক্লাস বাগানে ১৭০ টাকা, বি ক্লাস বাগানে ১৬৯ টাকা এবং সি ক্লাস বাগানে ১৬৮ টাকা দৈনিক মজুরি এবং ১৭০ টাকা মজুরি (২৮.০৮.২০২২ তারিখ থেকে কার্যকর) হিসেবে ৫২ দিনের মজুরির সমান উৎসব বোনাসের ২য় কিস্তি ৬০ শতাংশ আসন্ন দুর্গা পূজায় বিগত বছরের কাজের উপর নির্ভর করে পরিশোধ করা হবে। বিগত সময়ে সময়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি সমান নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে শুধু স্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্থায়ী শ্রমিকদের ঠকানো হচ্ছে। চা-সংসদ বোনাসের বিষয়ে ২৮.০৮.২০২২ তারিখ থেকে কার্যকর করার কথা উল্লেখ করে শ্রমিকদের উৎসব বোনাসের ১ম কিস্তির বকেয়া অংশ হতে বঞ্চিত করার পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে। এছাড়া দৈনিক ভিত্তিক মজুরি প্রাপ্ত শ্রমিকদের মজুরি ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের বেতন মাত্র ৩০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। চা-সংসদের পত্রে শ্রমিকদের এরিয়ার টাকার বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। চা-শ্রমিক সংঘের নেতারা মালিকপক্ষ ও ইউনিয়নের নেতাদের শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬(২০১৮ সালে সংশোধিত) এর ধারা ২ (২ক) এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধি ২০১৫(২০২২ সালে সংশোধিত) এর বিধি ১১১(৫) অনুযায়ী উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের সমান কিন্ত চা-সংসদ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করে কর্মে উপস্থিতির উপর নির্ভর করে হাজিরা/উৎসাহ বোনাসকে উৎসব বোনাস হিসেবে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। চা-শ্রমিক সংঘের নেতারা আসন্ন দুর্গার পূজার আগে সকল শ্রমিকের বকেয়া মজুরি (এরিয়ার) ও পূর্ণ উৎসব বোনাস প্রদানের দাবি জানান। অন্যথায় চা-শ্রমিকরা নিকট অতীতের শিক্ষায় বকেয়া মজুরি, আইনসম্মত উৎসব বোনাস এবং ন্যায্য মজুরির দাবিতে আবারও আন্দোলন সংগ্রামের পথে অগ্রসর হতে বাধ্য হবেন। উল্লেখ্য- আগামী ১ অক্টোবর থেকে হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু হবে এবং চা-বাগানের অধিকাংশ শ্রমিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী।