জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের উদ্বোধন পর্বে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকালে অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয়। এর আগে সকালে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। এছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আবাসস্থল হোটেল লোটে প্যালেস নিউইয়র্ক মিটিং রুমে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগদান শেষে লন্ডন ত্যাগ করেন তিনি। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লন্ডনের স্টানস্টেড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট। একই দিন স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২৫ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি।
আগামীকাল শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়গুলো তার বক্তব্যে উঠে আসবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সফরসূচি অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র ও জাতিসংঘ আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের টেকসই আবাসন শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ডব্লিউইএফের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর শোয়াব ক্লাউসের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) চ্যাম্পিয়নস মিটিংয়ে যোগ দেবেন। এছাড়া বিকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পদ্মা সেতুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। এরপর কসোভোর প্রেসিডেন্ট ড. ভজোসা ওসমানি-সাদ্রিউ, একুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো মেন্ডোজা ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল মুহিতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাবিষয়ক অনুষ্ঠানটি কো-স্পন্সর করবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত, এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিফ করবেন। একই দিনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে কো-চেয়ার হিসেবে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকেও তিনি যোগ দেবেন।
এছাড়া কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক আন্তোনিও ভিতোরিনো, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান, মেটার নিক ক্লেগ সাক্ষাৎ করবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে। ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া এবারের অধিবেশনে দ্য ফিউচার অব ডিজিটাল কো-অপারেশন: বিল্ডিং রেজিলিয়েন্স থ্রু সেইফ, ট্রাস্টেড অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ‘বহুপাক্ষিকতাবাদ ও খাদ্য নিরাপত্তা’ বিষয়ক আলাদা দুটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ দুটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অংশ নিতে পারেন।
নিউইয়র্কের কর্মসূচি শেষে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে রওনা হয়ে যুক্তরাজ্যে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করে ২ অক্টোবর মধ্যরাতে তার দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এর আগে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁসহ শত শত বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে শেখ হাসিনা সরকারি সফরে লন্ডন পৌঁছান। যুক্তরাজ্য সফরের চতুর্থ দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাকিংহাম প্যালেসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সম্রাটদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।