সারাদেশের আড়াই শতাধিক পৌরসভা ও চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরে ডিসেম্বর এবং আগামী বছরের মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে স্থানীয় স্তরের দুটি বৃহৎ পরিসরের নির্বাচন করার জন্য কাজ শুরু করেছে ইসি। নির্বাচন করতে হলে পৌরসভা ও ইউপিগুলোতে কি ধরনের জটিলতা (সুবিধা-অসুবিধা) রয়েছে তা দূর করতে বর্তমানে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে ইসির কর্মকর্তারা। নির্বাচনের আগে ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখে এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। ইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, আগামী অক্টোবর মাস থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুরু করা হবে। নভেম্বর থেকে জাতীয় সংসদের শূন্য আসনগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। এসব নির্বাচনের জন্য আর সময়ক্ষেপণ করা হবে না। তিনি বলেন, সবার আগে সম্পন্ন করা হবে ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন নির্বাচন। তবে চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন এমন সময় করা হবে যাতে এই সিটির প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নির্বাচিত নতুন মেয়র দায়িত্ব নিতে পারেন।
ইসি সূত্র জানায়, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিশনের নির্দেশে মাঠ অফিসের কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহের কাজটি করছেন। তাদের পাঠানো তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর পৌরসভা নির্বাচন আয়োজনের সম্মতি চেয়ে কমিশনে নথি তুলবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পৌর শাখা। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে এবং তাদের মতামতের আলোকে সম্পন্ন হবে এসব নির্বাচন। তবে করোনা এখনো ধীরলয়ে চলায় অতীতের মতো একদিনে নাকি একাধিক দিনে করা হবে, সে বিষয়ে এখনো কমিশন কোনর সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ইসি সূত্র জানায়, সর্বশেষ পৌরসভার সাধারণ নির্বাচনটি হয়েছিল গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। অন্যদিকে সারা দেশে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০-এর মতো নির্বাচন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে আসন্ন ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হবে। বাকি ৪ হাজারের মতো নির্বাচন আগামী বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। মাঠ পর্যায় থেকে তালিকা সংগ্রহ করা, নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিদ্ধকতা ও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা খতিয়ে দেখবেন ইসির মাঠ কর্মকর্তারা, যা ওই নির্বাচনের প্রাথমিক কর্মযজ্ঞ।
ইসি সূত্র জানায়, ইউপির মেয়াদোত্তীর্ণ ও কিছু শূন্য হওয়া উপ-নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর মাসে করার জন্য কমিশন নির্বাচন সম্মতি দিয়েছে। তবে সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল থেকে শুরু করা হবে, এর আগে আক্টোবর থেকে এ ধাপের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। এ নির্বাচনটি ২০১৬ সালের মার্চ থেকে বিভাগওয়ারী সম্পন্ন হয়েছিল। এবারো এই প্রক্রিয়ায় করার প্রাথমিক পরিকল্পনার রয়েছে বলে জানান এ সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার পৌরসভা ও ইউপির নির্বাচন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পাঁচ বছর শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ অথবা নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ থেকে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে গত ২১ মার্চ দেশে সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এই স্থগিতাদেশের কারণে সব প্রস্তুতি নিয়েও গত ২৯ মার্চ পূর্ব ঘোষিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। বর্তমানে প্রশাসক প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন; প্রশাসকের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে এ নির্বাচন করবে ইসি।
কমিশন সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম সিটি ছাড়াও করোনার কারণে স্থানীয় সরকারের ১১৫টি নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যু ও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন উপযোগী ১৮৭টি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে বলে জানা যায়।
বাবু/প্রিন্স