দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই দেবী দুর্গা দশ হস্তরুপে স্বর্গ হতে মর্ত্যে আগমন করেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করতে, রোগ, জরা, দুঃখ, ব্যাধি, কষ্ট লাঘবের দেবী দুর্গা আসছেন ক’দিন বাদেই। শরতের কাশফুল, ঢাকের বাদ্য আর প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। আগামী পহেলা অক্টোবর মহাষষ্ঠির মধ্যে দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উপলক্ষে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার ২২ টি ম-পে দিনরাত প্রতিমা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা। ০১ অক্টোবর (শনিবার) পুজা শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর (বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে। এবারে দেবী দুর্গা মায়ের আগমন ঘটবে গজে (হাতির পিঠে চড়ে) আর বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস করেন দেবীর আগমন আর প্রস্থানে অসুর নাশের পাশাপাশি সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলায় ভরে যাবে দেশ। পূণ্যময় হবে ধরা, আর ভাতৃত্বের বন্ধন ও রোগমুক্তি ঘটবে ভক্তদের। এমন আশায় অন্যরকম আনন্দে ভাসছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এদিকে পরিবার পরিজনের জন্য কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ঘরে বাইরে পূজাকে ঘিরে চলছে ব্যস্ততা। জামা কাপড় তৈরি, কেনা-কাটায় সরগরম শহরের বিপণী বিতানগুলোতে। শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে চারপাশে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। ব্যস্ত কারিগরদের রংতুলির ছোঁয়ায় পূর্ণতা পাচ্ছে দেবী দুর্গার রূপ। রকমারি আলোকসজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হচ্ছে ম-প ও আশেপাশের এলাকা। প্রায় ম-পেই বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। তবে সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান অনেক আয়োজকরা। এরপরও চলছে ব্যাপক আয়োজন। ভক্তদের আপ্যায়নে ব্যবস্থা নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আনন্দের এ উৎসব আয়োজনে কোন কমতি রাখছেন না তারা। শারদীয় উৎসব আনন্দময় ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বেলাবো উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জোর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের পরামর্শে প্রতি ম-পে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ম-প পরিচালনায় গঠন করা হয়েছে আলাদা আলাদা কমিটি। সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পূজা উদযাপনের জন্য স্ব স্ব ম-প কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকল কমিটি ও পূজা পরিচালনায় সার্বিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের হাতে। কয়েকটি পূজাম-পে ঘুরে দেখা যায়, কাঁদা মাটি, বাঁশ, খড় ও সুতলি দিয়ে তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বিভিন্ন মন্দিরে একেক জন কারিগর দুর্গাপূজা শুরুর ২০ দিন থেকে ২৫দিন আগে থেকেই প্রতিমা তৈরিতে সময় নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দক্ষ কারিগররা উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে শুরু করেন এসব প্রতিমা বানানোর কাজ। ইতিমধ্যে অধিকাংশ পূজাম-পের প্রতিমা তৈরির মাটির প্রধান কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী দুই একদিনের মধ্যে কারিগররা তাদের নিপুন হাতের প্রতিমা রং করার কাজ শুরু করবেন। প্রতিমা শিল্পী জহরলাল জানান, বংশ পরম্পরায় এ পেশায় জড়িত আছেন তারা। পূর্বপুরুষদের নিকট হতে শেখা কাজ দিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে তৈরি করছেন প্রতিমা। ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে তারা এসব প্রতিমা তৈরি করছেন। তবে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের অসন্তোষের কথা জানান তারা। বেলাব উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ও বেলাব সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, নির্বিঘ্নে ও উৎসবের পূর্ণ আবেশ নিয়ে ভক্তদের পূজা উদযাপন শান্তিপূর্ণ করতে আমি ও আমার সহকর্মীগণ সদা প্রস্তুত থাকবো। বেলাব থানা অফিসার ইনচার্জ তানভীর আহমেদ বলেন, দুর্গোৎসব সফল করতে উপজেলা পুলিশ প্রশাসন দফায় দফায় বৈঠক করছেন আয়োজকদের সঙ্গে। পূজায় নিরাপত্তায় প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক ও ম-প ভিত্তিক টহল টিম গঠন করা হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।