সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ অপরাহ্ন

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রেণে এডিস মশা নির্মূলে কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় জরিপ চালিয়ে ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত মাস ধরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডে চালানো এই জরিপে ২৭টি ওয়ার্ডকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর এসব ওয়ার্ডকে গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে করা জরিপের ফলাফল সংগ্রহ করে তারা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে ইতোমধ্যে তারা জনসচেতনায় মাইকিং, ক্যাম্পেইন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা এবং মশক নিধনে কীটনাশক ছেটানোর কাজ করছেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকার মশার ঘনত্ব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ডিএনসিসি এলাকার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ১১, ১৪, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২৪, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৯ নম্বর। অন্যদিকে ডিএসসিসি এলাকার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ৩৪, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৮ এবং ৫১।
জরিপে মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, ৮ নম্বর ওয়ার্ড (কমলাপুর ও মতিঝিল), ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড ( নবাবপুর ও বংশাল) এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে (ওয়ারী ও নারিন্দা)। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমরা এ রিপোর্ট অনানুষ্ঠানিকভাবে তিন সপ্তাহ আগে পেয়েছিলাম। সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা তাদের রিপোর্টকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আমরা চিহ্নিত এলাকার প্রত্যেক অলি-গলিতে আমরা কার্যক্রম করেছি।‘
এসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারাভিযান চালিয়েছে সিটি করপোরেশন। সেই সঙ্গে এসব এলাকার মসজিদগুলোর ইমামদের দিয়ে জুমার নামাজে ডেঙ্গু নিয়ে বয়ান করানো হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, এসব এলাকার বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা ও কোথাও যেন পানি না জমে; সেজন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোর স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আমরা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করেছি এবং মাইকিংও করা হয়েছে’ নিয়মিত ফগিং ও লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম বেগবান করা ও মোবাইল কোর্ট জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমাদের এলাকায় গড়ে রোগী ৩৫-৪৫ এ ওঠানামা করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর যেসব ওয়ার্ডকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে, সেসব ওয়ার্ডেও আমাদের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম।’
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, ‘জরিপের দেখানো হয়েছে, আমাদের এলাকায় বেশির ভাগ এডিসের লার্ভার উৎস হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবন। তাই আমরা এসব ভবনে আমাদের অভিযান জোরদার করেছি। যেসব ভবন মালিক নির্মাধীন ভবনে পানি জমা করে রাখছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলার পাশাপাশি নিয়মিত মামলাও করছি।’ উত্তর সিটির নিয়মিত মশক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পাচঁটি অ লের আওতাধীন ভবনের ছাদে এক মাস ধরে ড্রোন উড়িয়ে ছাদবাগানগুলো চিহ্নিত করেছি। এই সার্ভের মাধ্যমে এডিস মশার প্রজনন স্থল চিহ্নিত করে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ১ আখ ৪ হাজার ৫০০টি বাড়িতে ড্রোনের সাহায্যে সার্ভে করা হয়েছে। সার্ভে কার্যক্রমে মোট ২ হাজার ৮৮৭টি বাড়িতে ছাদ বাগান পাওয়া গেছে। মোট ১৮৪টি বাড়িতে পানির উৎস পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে।’
হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে সে সকল ঠিকানায় ব্যাপকভাবে লার্ভিসাইডিং ও ফগিং করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসির আওতাধীন সকল লেক, ডোবা, নালা, ও জলাশয়ে মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রনে গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করা হচ্ছে। অ ল-২, ৪ ও ৮ এ গাপ্পি মাছের চাষ করা হচ্ছে। নগরবাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক বার্তা সম্মলিত ১ লাখ ৫০ হাজার পিস স্টিকার এবং ১ লাখ পিস লিফলেট প্রস্তুত করে বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘১০টায় ১০ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসা করি পরিষ্কার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতি শনিবার প্রতিটি অ লে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রতি শনিবার একটি অ লে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে নতুন ৪৫০টি হস্তচালিত মেশিন, ২৫০টি ফগার মেশিন, ৩৬টি হুইলব্যারো মেশিন এবং বিভিন্ন ডোবা ও জলাশয়ে সঠিকভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করার জন্য ৩০টি প্লাস্টিকের নৌকা ক্রয় করা হয়েছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com