বার্সেলোনার কোভিড টেস্টে অংশ নেননি। নেননি প্রাক-মৌসুমের প্রথম অনুশীলনেও। লিওনেল মেসি নিজে থেকেই মনে করছেন, তিনি এখন আর বার্সেলোনা খেলোয়াড় নন। মূলতঃ বার্সার কাছে নিজের ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দেয়ার পর মেসি যে আর ন্যু ক্যাম্পে থাকছেন না, এটা প্রায় নিশ্চিত। ২০০০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বার্সার ফুটবল একাডেমি লা মাসিয়ায় যোগ দেয়ার পর একে একে কেটে গেছে ২০টি বছর। এর মধ্যেই মেসি এবং বার্সেলোনা পরিণত হয়েছিলেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। যেন মূদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। মেসিকে ছাড়া বার্সা, বার্সাকে ছাড়া মেসিকে চিন্তা করারও উপায় ছিল না।
এখন সে সবই অতীত। মেসির পথ এখন বার্সা থেকে বেঁকে গেছে। বিচ্ছেদটা শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে হয়ে গেছে। শারীরিকভাবে বিচ্ছেদ ঘটার সময়টাও খুব অল্প। কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো ঘোষণাটা চলে আসবে। মূলতঃ কেন বার্সা ছাড়তে চাচ্ছেন মেস্তি কিছু কারণ ফুটবল সমর্থক কিংবা মেসি ভক্ত- সবারই জানা আছে। তবে সঠিকভাবে কারণগুলো অনেকেরই জানা নেই। স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়া দৈনিক মার্কা ১০টি কারণগুলো তুলে ধরেছে পাঠকদের জন্য। এর মধ্যে আবার কিছু আছে আইনগত কারণ, কিছু রয়েছে খেলাধুলা সম্পর্কিত কারণ।
আইনগত কারণ: ১. মেসি বার্সেলোনা ছাড়ার ইচ্ছেটা ক্লাবের কাছে প্রকাশ করেছেন অনেক পরে, কিছুটা সময় নিয়ে। কারণটা হচ্ছে, মৌসুম শেষ করার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়া। মূলতঃ তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশ করার শেষ সময় ছিল ১০ জুন। যদিও এখন এই তারিখটা নিয়েই চলছে আইনী খেলা। এই তারিখটা নিয়ে বার্সা তার সঙ্গে যে আচরণ করছে, তাতে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন মেসি। ২. সর্বশেষ মেসির সঙ্গে বার্সার যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে কিন্তু ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ নির্ধারিত ছিল না। ৩. বার্সা প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তেম্যু বেশ কয়েকবার কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মেসি যখনই চাইবেন, তখনই বার্সা ছেড়ে যেতে পারবেন।
খেলাধুলা সম্পর্কিত কারণ: ৪. বার্সেলোনার সামনে যেসব প্রজেক্ট রয়েছে, সেগুলো খুব বেশি উচ্চাভিলাসি নয় এবং মেসিও বার্সার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত। তিনি নিশ্চিত নন, কি হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে। এমনকি প্রায় সময়ই পুরো দল একা তার ওপর নির্ভর করে দলের জয়-পরাজয়ের ব্যপারে। যেটা কোনোভাবেই মানতে রাজি নন মেসি। ৫. কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করার সময় এবং আচরণ- কোনোটাই পছন্দ ছিল না মেসির। মূলতঃ তখন থেকেই মেসি বার্সেলোনায় নিজেকে অনিরাপদ ভাবতে শুরু করেন।
৬. বার্সেলোনা বোর্ডের সঙ্গেই মূলতঃ মেসির সমস্যার শুরু। গত কয়েকমাসে বার্সেলোনা এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে মোটেও একমত ছিলেন না মেসি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্যান্ডাল এবং ইআরটিই নিয়ে বার্সার অবস্থানকেও মেসি সমর্থন করেননি।
৭. বার্সার অন্য অনেক কর্মকর্তার সঙ্গেই মেসির সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। যেমন স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরিক আবিদাল। যাকে অনেক খেলোয়াড়ই দায়ী করে থাকেন আর্নেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করার জন্য। ৮. মেসি মনে করেন, বিভিন্ন বিষিয়ে তিনি কোনো মতামত দিলে সেগুলো শোনা হয় না ক্লাবে। বিশেষ করে বার্সার একাডেমিকে কিভাবে আরও ব্যবহারযোগ্য করা যায়, কিভাবে সেখান থেকে প্রতিভা তুলে আনা যায়, কিংবা ক্লাবের বিভিন্ন বিষয়ে কোনো মতামত দিলে সেগুলো আগ্রাহ্য করা হয়।
৯. মেসি মনে করেন, বার্সায় একটি যুগের সমাপ্তি হতে চলেছে। তিনি জেরার্ড পিকের সঙ্গে একমত যে, সিনিয়র খেলোয়াড়দের এখনই জায়গা ছেড়ে সরে দাঁড়ানো প্রয়োজন এবং সে জায়গায় নতুন রক্তের সঞ্চার করা প্রয়োজন। ১০. বার্সেলোনার সোশ্যাল মিডিয়া কেলেঙ্কারিতে টার্গেট করা হয় মেসি এবং তার পরিবারকে। ক্লাবের পক্ষ থেকে এসব ঘটার কারণে তিনি মানসিকভাবেও বেশ আহত হয়েছিলেন।