বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি অবস্থায়, কারাবন্দি হয়ে আছেন। গণতন্ত্রের জন্য তার যে ত্যাগ বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য-এটা নিসন্দেহ অপরিসীম একটা ত্যাগ। তাকে মুক্ত করতে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নাই। আজকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের বড় প্রতিজ্ঞা হোক- যেকোনো মূল্যে আমাদের চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্রকে উদ্ধার করা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। দেশনেত্রীকে মুক্ত না করলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না- এটা হচ্ছে জরুরী কথা এবং সেটা আমাদেরকে অবশ্যই অত্যন্ত যথাযথ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সফল করতে হবে। মঙ্গলবার দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গণতন্ত্র ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে সংগঠিত হওয়া আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ বিশ্ব রাজনীতি পরিবর্তিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালে যে পরিস্থিতি ছিলো, এখনকার পরিস্থিতি এক নয়, ১৯৭৫ সালে যে পরিস্থিতি ছিলো, এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। আজকে ২০২০ সালে যে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট, সেই বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটকে অনুধাবণ করে এবং যোগ্য কৌশল উদ্ভাবন করে আমাদেরকে সেই কৌশলের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য গণতান্ত্রিকভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন,‘অত্যন্ত সত্য কথা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু সেই আন্দোলন কিভাবে ফলপ্রসু হবে সেই বিষয়টা আমাদেরকে দেখতে হবে, বুঝতে হবে এবং তার জন্য আমাদেরকে আলোচনা করতে হবে, আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারের অপপ্রচারের উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার কৌশল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব এর বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনকে ‘ভ্যানগার্ডের’ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,‘আসুন হতাশ হবেন না, অনেকে হতাশার কথা বলেন। হতাশ হওয়ার হওয়ার সুযোগ নেই। এটা বিএনপির ওপর দায়িত্ব। গোটা জাতি এটা বিএনপির ওপর দিয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন,‘আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর গোটা জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে। তিনি বিএনপিকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন, এই জাতিকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে, গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যার স্বপ্ন শহীদ জিয়াউর রহমান দেখিছিলেন যার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং যার পতাকা দেশনেত্রী উড্ডীন করেছেন- সেটা সফল করতে হবে।’
৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মহানগর দক্ষিণের হাবিব উন নবী খান সোহেল, উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম।
অনুষ্ঠানে অঙ্গসংগঠনের কাজী আবুল বাশার, আবদুল আলীম নকি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, হাসান জাফির তুহিন, সুলতানা আহমেদ, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইকবাল হোসেন শ্যামলও যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে উলামা দলের শাহ নেছারুল হক দলের প্রতিষ্ঠাতাসহ নেতা-কর্মীদের জন্য মোনাজাত পরিচালনা করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,‘বর্তমান বাংলাদেশ দুইটা দুযোর্গের মধ্যে আছে। একটা হচ্ছে আওয়ামী দুযোর্গ আরেকটা হচ্ছে করোনা দুযোর্গ। এই দুই দুযোর্গের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করছে। সেজন্য দেশে রাজনীতি নেই, গণতন্ত্র নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এই অবস্থা থেকে পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবর্তন করার দায়িত্বটা বিএনপির। কেননা আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা তো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে না। সেজন্য বিএনপিকে সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার গুরু দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের সকল জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন,‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটা অহেতুক বানোয়াট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। দুই বছর তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। এখন তার সাজা স্থগিত রয়েছে। কিন্তু অন্তরীণ থাকার মতোই। তিনি সম্পূর্ণভাবে মুক্ত নন। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে তাকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা। এটা আমাদের একটা অন্যতম কর্তব্য হবে বা লক্ষ্য হবে বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে আমাদের মাঝখানে নিয়ে আসা।’
লন্ডন থেকে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেয়ায় তারেক রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন,‘বিএনপিকে ভয় পায় বলে সরকার প্রধানসহ নেতারা বিএনপি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি আরো বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন হবে। তবে এই পতন নিজের থেকে হবে না। অন্য কেউ এসে করে দেবে না। এই পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে, দেশে গণতন্ত্র আমাদেরকেই ফিরিয়ে আনতে হবে।
মওদুদ বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র, বেগম খালেদা জিয়ার সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশে একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আন্দোলন করতে হবে। আমাদেরকে প্রয়োজনে আরো ধৈর্য্য ধরতে হবে কিন্তু আন্দোলন ছাড়াই এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,‘এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিলুপ্তি ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার, কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার কখনোই বিনা চ্যালেঞ্জে বিনা আন্দোলনে যায় না, আওয়ামী লীগও যাবে না। কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সরকার- এদেরকে তাড়াতে হবে। এদের তাড়ানোর জন্য এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের শপথ হোক- আমরা যেকোনো মূল্যে আমাদের নেতার নির্দেশে আমরা এমন কিছু করবো, যেমনি আমরা নব্বইয়ে এবং পরবর্তি সময়ের আন্দোলনে আমরা ফ্যাসিবাদী সরকারকে তাঁড়িয়েছিলাম, এই সরকারকেও ইনশাল্লাহ আমরা তাড়াবো। আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’