প্রাকৃতিকভাবেই কুমিল্লার মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা বাংলাদেশে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আবার কুমিল্লার মাছ দেশের অন্য জেলায় উৎপাদিত মাছের চেয়ে অনেক সুস্বাদু। এখানে নদ-নদী, পুকুর, দিঘী, জলাশয় ও প্লাবন ভূমিতে কুমিল্লা জেলার চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদন হয়। কুমিল্লায় মৎস্য সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটছে।
কুমিল্লায় নদ-নদী, মুক্ত জলাশয় আর ব্যক্তি উদ্যোগে পুকুর দিঘীতে মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য আসছে। বিশেষত গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন ও তরুণ-যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কুমিল্লায় প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। টানা সময় ধরে মাছ চাষে বিপ্লব সৃষ্টি করে যাচ্ছে কুমিল্লা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ষোল উপজেলার ৮৪ হাজার ৪২৪টি পুকুরে প্রতি মৌসুমে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়াও প্লাবন ভূমি, খামার, বিল ইত্যাদিতে লক্ষাধিক মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।
কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলের দাউদকান্দি, মুরাদনগর, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, চান্দিনা উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টরের ৭০টি প্লাবন ভূমিতে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন মাছ। জেলেদের পাশাপাশি ফসলি জমির কৃষকরাও প্লাবন ভূমির মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবার শিক্ষিত তরুণরাও মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সরপুঁটি, তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভারকার্প, পাঙ্গাশ, ঘাসকার্পসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকে। প্লাবন ভূমির মাছ চাষে তরুণ ও যুবকরাও আগ্রহী হয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বাংলাদেশে দাউদকান্দিতেই প্রথম প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ শুরু হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ এখন সারাদেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবার কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ উপজেলায় মাছ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছে মৎস্য চাষিরা।
কুমিল্লা জেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন মাছ। চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত সোয়া লাখ মেট্রিক টন মাছ বেশি উৎপাদিত হয়ে এখানকার প্রায় ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীর আমিষ পূরণ করে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাকি সিংহভাগ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
স্থানীয় মৎস্য চাষি আলমগীর হোসেন বাসসকে বলেন, প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের ফলে দাউদকান্দি ও আশপাশের জলাঞ্চলের মানুষের অভাব ঘুচেছে। হাসি ফুটেছে তাদের মুখে, সুখ ফিরেছে সংসারে। তাঁর মতে, শিক্ষিত তরুণরাই এখন এ পেশায় বেশি ঝুঁকছে। ফলে কমেছে বেকারত্বও। তাদের দেখাদেখি আশপাশের এলাকার মানুষও এখন প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানান আলমগীর।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা মৎস কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বাসসকে বলেন, শুধু কুমিল্লার দাউদকান্দিতে তিন হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হয়। এ উপজেলার শিক্ষিত তরুণরা মাছ চাষে সম্পৃক্ত হওয়ায় বেকারত্ব দূর হয়েছে। সেই সঙ্গে মাছের উৎপাদনও বাড়ছে। তাছাড়া জেলায় মাছের চাষ ও রোগ প্রতিরোধে মৎস্য বিভাগ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।