স্বাস্থ্যসেবার কোনরকম ঘাটতি না থাকলেও বিভিন্নভাবে এই হাসপাতালের সম্পত্তি দখলের কারণে পরিবেশগতভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা বাজার রুপসা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আনুমানিক ২০১৯-২০ সালের দিকে এলাকার জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষার জন্য এবং বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার তাগিদে এখানে এই হাসপাতালটি তৈরি করা হয়। তৎকালীন সময়ে হাসপাতালটি স্থাপনে উল্লেখিত স্থানে রূপসা জমিদার বাড়ির লোকজন এ হাসপাতালের নামে ৮০ শতাংশ সম্পত্তি দান করেন। পরে বিএস ফাইনালে ৭০ শতাংশ সম্পত্তি খতিয়ানভুক্ত হয়, কিন্তু বর্তমানে চতুর্দিক থেকে এই সম্পত্তি জোরদারদের দখল রাজত্বের কারণে বর্তমানে সর্বসাকুল্যে সম্পত্তি আছে মাত্র ৫৩ শতাংশ। মূলত এই দখল রাজত্বের কারণে হাসপাতালে চতুর্পাশে এখন ময়লার ভাগাড়। যার কারণে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ময়লার দুর্গন্ধে বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। সরোজমিনে গত ০৪ অক্টোবর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাক্তার লুৎফর রহমান এক এক করে বিভিন্ন রোগীদের চিকিৎসাসেবা ও ঔষুধ দিয়ে যাচ্ছেন। এবং জটিল ও কঠিন রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ সহ উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এ সময় রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে ডাক্তার লুৎফর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ হাসপাতলে দৈনিক ৪৫ থেকে ৬৫ জন রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালের ৬-৭-৮-১৫-১৬ নং ইউনিয়ন থেকে রোগীরা সেবা নিতে আসেন। তিনি বলেন এত রোগীর পরিমাপে ঔষধ সাপ্লাই কম। গ্যাস্ট্রিক, ব্যথার ঔষধ এবং এন্টিবায়োটিক সহ আরো কিছু ওষুধের সাপ্লাই পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এছাড়া হাসপাতালে রং করা, দরজা, জানালা মেরামত করা জরুরি। হাসপাতালটিকে জনবল সংকট চরম পর্যায়ে বলে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, এখানে নাইটগার্ড, দারোয়ান, আয়া নাই। এবং নিয়মিত একজন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও সেটাও নাই। এ সময় স্থানীয় রোগীদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা এখানে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার লুৎফর রহমান আন্তরিকতার সাথে আমাদের সেবা দিয়ে থাকেন। তারা বলেন, এত বড় হাসপাতাল কিন্তু এখানে ডাক্তার লুৎফর রহমান এবং ঔষধ বিতরণ কারীকে ছাড়া আর কাউকে দেখি না। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় হাসপাতালের ভেতরে খারাপ দুর্গন্ধ পাওয়ার বিষয়ে ডাক্তার লুৎফুর রহমান বলেন, হাসপাতালের চতুর্দিক বিশেষ করে পূর্ব পাশ দিয়ে রুপসা হাই স্কুল। এবং রূপসা হাই স্কুল আমাদের অনেক সম্পদ জোরপূর্বক দখল করে আছে। এবং সেখানে তারা বহুতল ভবন তৈরি মার্কেট নির্মাণ করার পাঁয়তারা করছে। বর্তমানে সেখানে বাজারের সমস্ত ময়লা এনে ফেলার কারণে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এসময় তিনি বলেন হাসপাতালে মোট ৮০ শতাংশ সম্পত্তি থাকার কথা, কিন্তু বর্তমানের সরোজমিনে আছে মাত্র ৫৩ শতাংশ। আমাদের হাসপাতালের ফাইনাল খতিয়ান মোতাবেক ৭০ শতাংশ সম্পত্তি থাকার কথা। ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে এসও নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের এই হাসপাতলে ৮০ শতাংশ সম্পত্তি দিয়েছিলেন রূপসার জমিদারেরা। কিন্তু এখন আছে মাত্র ৫৩ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, রুপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় তাদের সম্পত্তি দাবি করে হাসপাতালের পূর্ব পাশে আমাদের সম্পত্তি দখল করে মার্কেট করেছে।এখন আবার তারা অনেকাংশ সম্পত্তি দখল করে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে রুপসা আহমদিয়া হাই স্কুল আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করে আমাদেরকে কোনরকম নোটিশ না করে এবং আমাদেরকে কোনরকম অবগত না করেও ওই মামলায় তারা এক তরপা রায় নেয়। পরে আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মামলার বিরুদ্ধে আমরা আপিল করলে মাননীয় আদালত তাদের পক্ষের রায় বাতিল করে মামলা চলমান করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে রুপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আকরামুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালের কোন সম্পত্তির উপর বেড়া দেইনি। এগুলো আমাদের সম্পত্তি। হাসপাতালের সম্পত্তি আরো পশ্চিমে মাছ বাজারের দিকে। আর হাসপাতালের পূর্ব দিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এগুলো আমাদের সম্পত্তি।সেখানে আমাদের স্কুল এবং বাজারের ব্যবসায়ীরা ময়লা ফেলে, যার কারণে হাসপাতালে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরাও এর প্রতিকার চাই বলে তিনি জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার প্রদান ডাক্তার আশরাফ আহমেদ চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রুপসা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার দিক থেকে আমরা কোন রকম ত্রুটি রাখি না। জনবল সংকটের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।এছাড়া হাসপাতালে সম্পত্তি নিয়ে পার্শ্ববর্তী রুপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমাদের হাসপাতালের সম্পত্তি নিয়ে একটি মামলা করে। যার নং-৯৪০/১৪। এবং আমাদের অনেক সম্পদ তারা ও বিভিন্নজন দখল করে আছে।