‘ওয়াক ফর লাইফ এন্ড আর্থ, স্টপ গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ মোটোকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে রাঙ্গামাটির তিনমুখ পিলার পর্যন্ত প্রথমবারের মতো ক্রস কান্ট্রি হাইকিং সম্পন্ন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসফিকুল হাসান টনি। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগ ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী। এলবাট্রস, এডভেঞ্চার এন্ড আউটডোরস ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহযোগিতায় এই হাইকিং-এ অংশ নিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, ‘সলো ক্রস কান্ট্রি ওয়েফারিং মিশন-২০২২’ শিরোনামে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে হাইকিং শুরু করেন মাসফিকুল হাসান টনি।তিনি তার এ ভ্রমন শেষ করেন ৬ সেপ্টেম্বর (রোজ বৃহস্পতিবার) ভোর ৫ টা ৫৫ মিনিটে। এই ভ্রমণে সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা স্থল বন্দর হতে রাঙামাটির তিনমুখ পিলার পর্যন্ত যেখানে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বর্ডার মিলিত হয়েছে।
মাসফিকুল জানান, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মোটো ‘ওয়াক ফর লাইফ এন্ড আর্থ, স্টপ গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ নিয়ে এই অভিযানটি চলছে। এসব অঞ্চলের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক তথ্য ও প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জনে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দেখেছি মেঘনা, কির্তনখোলা, কালাবদর, বগুড়া, বেলাই, তেঁতুলিয়া সহ প্রায় ২৫টি নদী। তার সঙ্গে অসংখ্য খাল, চ্যানেল, মাছের ঘের এবং দিঘী। সুন্দরবন অঞ্চলেরও দেখা মিলেছে এই রূটে। সামনে এখনো অপেক্ষা করছে আরো অনেক নদী, খাল, সমুদ্র উপকূলীয় পথ এবং ১৫০ কি.মি এরও বেশি পথ। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ, জনপ্রিয় খাবার ইত্যাদি সম্পর্কে যেমন প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে তার সঙ্গে এতো কম সময়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের চমৎকার সব নদীরও দেখা মিলছে। জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক ইস্যু হিসেবে উক্ত রূট সবচেয়ে সেরা বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের পর্যটন খাত ও এগিয়ে চলেছে। তবে এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পার্ক কিংবা কৃত্রিম নির্মিত স্পটের তুলনায় আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক বেশি। অনেক গ্রাম ও পর্যটনের উৎস হয়ে উঠতে পারে। পর্যটনের উদ্দেশ্য যখন আমাদের কাছে জ্ঞান আহরণ হয়ে উঠবে ঠিক তখনই আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো সচেতন হয়ে উঠবো। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে নানা সৌন্দর্য। আমদের দৃষ্টিসীমা হয়তো এখনো সে পর্যন্ত পৌছায়নি। পৃথিবী তথা দেশকে সুস্থ্য রাখলে তবেই আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো থাকবে। আমাদের খাদ্য থেকে শুরু করে সব কিছুর সঙ্গেই জলবায়ু ও পরিবেশ সম্পৃক্ত। তাই আমাদের উচিৎ অপচয় রোধ করা, দূষণ রোধ করা, বৃক্ষ নিধন রোধ করা, প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কমানো ইত্যাদি।
ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। কখনো ইউনিয়র পরিষদ কখনো হোটেল, কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়। তার সঙ্গে ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ, ভরত রাজার মন্দিরের মতো স্থাপনারও দেখা মিলেছে। সাতক্ষীরার বিখ্যাত চুই ঝাল, গরু ও খাসির মাংস, বাগেরহাটের গলদা চিংড়ী, বরিশালের আমড়া, পিরোজপুরের পেয়ারার স্বাদও নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পূর্বের টেকনাফ-তেঁতুলিয়া সহ ৪টি রূটে ক্রস কান্ট্রি হয়েছে। তবে এই রূট আমিই প্রথম এক্সপ্লোর করছি এবং একই সাথে মিয়ানমার বর্ডারে এই প্রথম ক্রস কান্ট্রি অভিযানের শুরু বা শেষ হতে চলেছে।