জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটির সংবাদ সম্মেলন
জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে তাদের ইন্ধনেই এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে বলে মনে করা হবে এবং তৌহিদী জনতা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদের রাজপথে নেমে আসবে’। কতিপয় অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্য কর্তৃক সিরাতুন্নী (সা.) পালনে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাধাদানসহ নবী প্রেমিকদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং গ্রেফতারকৃতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল সোমবার ১০ অক্টোবর বিকাল ৪ টায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি মিলনায়তয়নে জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমিটির উপদেষ্টা ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান এ কথা বলেছেন।
মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও আবেগের এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদার দিন। এই দিনেই বিশ^মানবতার মুক্তির দূত বিশ^নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) দুনিয়াতে আগমন করেন এবং একই দিনে তিনি ওফাতও লাভ করেন। তাই এই দিবসের সাথে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বোধ-বিশ^াস, আবেগ-অনুভূতি জড়িত থাকা খুবই স্বাভাবিক। বস্তত, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বিশে^র সর্বযুগের ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। এই মহামানব সম্পর্কে কালামে পাকের সূরা আল কালামের ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’ ।
এতে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর ছিল আরবী ক্যালেন্ডার মোতাবেক পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল। প্রতি বছরের ন্যায় বাংলাদেশসহ সারা বিশে^ই যথাযোগ্য মর্যাদায় বিদসটি পালিত হয়েছে। প্রাণপ্রিয় নবী (সা.)এর অনুসারিগণ সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সিরাত আলোচনা, দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব, রাজপথে শোভাযাত্রা, নাতে রাসূল (সা.) পরিবেশন সহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছেন। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্য ধর্মপ্রাণ মানুষের এই আবেগকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা রাজধানীর বনানী, গুলশান ও উত্তরায় জাতীয় সিরাত কমিটির ভ্রাম্যমাণ নাতে রাসূল (সা.) পরিবেশনায় অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাধাদান করেছেন এবং পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি, এসি ও ওসি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে উত্তরায় জসিম উদ্দিন সড়কে নাতে রাসূল পরিবেশনরত অবস্থায় ট্রাক থেকে গাজী মনির, আবুল কালাম, রাকিব, আজাদ, আব্দুল হক ও হাসান আলীসহ ৯ জন নবীপ্রেমিকে তুলে নেয়ার মত নিন্দনীয় ঘটনার অবতারণা করেছেন। যা মুসলিম উম্মাহর কলিজায় মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। সংবিধান অনুযায়ি সকল ধর্মের মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার স্বীকৃত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা কেন বিশ^নবী (সা.)এর প্রতি দরূদ পড়তে পারবেন না তা কোন ভাবেই বোধগম্য নয়।
ড. হাবিব বলেন, আমাদের সংবিধানের (২ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের (১২ঘ) অনুচ্ছেদে ব্যক্তির স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকারের নিশ্চিয়তা প্রদান করা হয়েছে। কিছুদিন আগে এদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিবিঘ্নে দূর্গাপূজা পালন করেছেন। রাষ্ট্রসহ এদেশের সর্বস্তরের জনগণ তাদেরকে উৎসব পালনে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, এবার অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য ১২ রবিউল আউয়াল পালনে নানাবিধ বাধা-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষতভাবে রাজধানীর বনানী, গুলশান ও উত্তরায় জাতীয় সিরাত কমিটির ভ্রাম্যমাণ নাতে রাসূল (সা.) পরিবেশনায় বাধা প্রদান করা হয়েছে এবং উত্তরায় জসিম উদ্দিন সড়কের ট্রাক থেকে ৯ জনকে তুলে নেয়ার অতিনিন্দনীয় ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। মূলত, নাতে রাসূল (সা.) পরিবেশনের জন্য গ্রেফতার মুসলামনদের আবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত এবং শুধু বেআইনীই নয় বরং ব্যক্তির ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। তাই দায়িদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগ মামলা করাই সঙ্গত।
পরিশেষে বলা হয়, ‘আমরা অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের এই ধরনের উস্কানীমূলক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আটককৃতদের আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দানের জোর দাবি করছি। একই সাথে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ি পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার পূর্বক যথাযথা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে তাদের ইন্ধনেই এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে বলে মনে করা হবে এবং তৌহিদী জনতা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদের রাজপথে নেমে আসবে’।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. কামরুল হাসান, মাওলানা শামসুল হক নিজামী, মাওলানা আব্দুল হালীম, মাওলালা ডা. আবু তাহের, মাওলানা আইয়ুব আলী ও ইব্রাহীম বাহারী প্রমূখ। প্রেসবিজ্ঞপ্তি