গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও তাদের জীবিকা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসকে সামনে রেখে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তামান্না রহমান।
বক্তৃতা করেন কমিটির সদস্য মাসুদা ফারুক রত্না, মঞ্জু আরা বেগম, সৈয়দ আমিনুল হক, শেখ আসাদ, সালমা আক্তার, মনোয়ারা পারভীন, তাহরিমা আফরোজ, সৈয়দা শামীমা সুলতানা, প্রতিভা ব্যানাঞ্জি, মোস্তফা কামাল আকন্দ ও ফেরদৌস আরা রুমী।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, খাবার পানির সঙ্গে যে পরিমাণ লবণ নারীদের দেহে প্রবেশ করছে তার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের গর্ভপাত বেশি হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানোর মতো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকায় বেশির ভাগ প্রান্তিক নারী জরায়ু কেটে ফেলাকেই স্থায়ী সমাধান মনে করছেন। সুপেয় পানির অভাবে অধিকাংশ মেয়েরা মাসিকের সময় ব্যবহৃত কাপড় লবণপানি দিয়ে পরিষ্কার করতে বাধ্য হয়। যা তাদের জরায়ুতে নানা রোগের সংক্রমণ ঘটায়। অন্যদিকে পাহাড়ি নারীরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, তার ওপর পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ বেয়ে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। জলবায়ু আক্রান্ত এলাকায় একদিকে যেমন কিশোরী বিয়ের ঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। বিশেষ করে তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জীবিকা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল, নিম্নাঞ্চল, পার্বত্য, হাওরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা এবং পরিবেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। খাদ্য, পুষ্টি, জীবিকার পাশাপাশি নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাব চূড়ান্ত। মাত্রাতিরিক্ত লোনা পানির দৈনন্দিন ব্যবহারের ফলে জরায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া, কিশোরীদের মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের ব্যাঘাত, দৈনন্দিক কাজে লবণ পানির ব্যবহারে চর্মরোগ কিংবা বন উজাড় হওয়ার কারণে পাহাড়ি ছড়াগুলোতে সুপেয় পানির অভাব ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিকর প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে লবণাক্ত এলাকায় সরকারি খরচে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে নারী ও কিশোরীদের বিশেষায়িত সেবা প্রদান এবং বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়।