নির্দলীয় সরকারের অধীনে ইসি গঠনের পর নির্বাচনের দাবিতে দ্রুত বদলে যাচ্ছে রাজনীতির ময়দানের দৃশ্য। বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো বাধা মানবে না। মানছে না। গত শনিবারের আগের দিন থেকেই প্রায় বিচ্ছিন্ন বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ। আশপাশের জেলার সঙ্গে বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় কোনো ঘোষণা ছাড়াই। অন্যান্য যানবাহনে চালানো হয় তল্লাশি। সমাবেশ ঘিরে টান টান উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই। পাল্টা সমাবেশ করার কথা বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু নানা কৌশলে নির্ধারিত সমাবেশ বাস্তবায়ন করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে বিভাগীয় এই গণসমাবেশে ঢল নামে নেতাকর্মীদের। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বিশাল এই সমাবেশ করে চাঙ্গা ময়মনসিংহ বিএনপি। উচ্ছ্বসিত কেন্দ্রীয় নেতারাও। তারা বলেছেন, ময়মনসিংহের এই সমাবেশ প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো বাধা মানবে না।
গত কয়েক মাস ধরে রাজনীতির ময়দানে বড় ধরনের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিএনপিসহ সরকার বিরোধীদের জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি ঘিরে গণমানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ক্ষমতাসীনদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সরকারের শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এখন বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলায় ব্যস্ত। যেখানে বিএনপি বা বিরোধীরা কর্মসূচি পালন করছে, সেখানেই হামলা, বাধা, গ্রেফতার, মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি দোয়া মাহফিল বা স্মরণসভায়ও বাধা দেয়া হচ্ছে। সচল করা হচ্ছে পুরনো মামলা। একইসাথে জামিনে থাকা মামলায় জেলে পাঠানোর হিড়িক চলছে। এতকিছুর পরও যখন আন্দোলন বা গণজমায়েত বন্ধ করা যাচ্ছে না তখন ভিন্ন কৌশলে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। তারা এখন সরকারের বিশেষ আদেশে জামিনে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে। চার দলীয় জোটের শীর্ষনেতাদের মামলাগুলো সামনে নিয়ে আসছে। সরকারের মন্ত্রীরা সরাসরিই বলছেন, বিএনপি যদি তাদের চলমান কর্মসূচি থেকে ফিরে না আসে তাহলে সরকার বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি ভেবে দেখবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে রাজপথে ঠেকাতে ব্যাপক তৎপর আওয়ামী লীগের কোনো কিছুই কাজে আসবে না। বরং বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে জনগণের মাঝে ক্ষোভের মাত্রা আরও তীব্র হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পুলিশের গুলীতে পাঁচ নেতাকর্মী নিহত ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির চলমান কর্মসূচির তৃতীয় ধাপে চলছে বিভাগীয় মহাসমাবেশ। এরই মধ্যে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে মহাসমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশের আগেরদিন থেকেই পুরো চট্টগ্রাম যেন অঘোষিত হরতাল পালিত হয়। চট্টগ্রামের বাইরে থেকে যেন কোনো মানুষ শহরে প্রবেশ করতে না পারে তার সব ব্যবস্থাই করে ক্ষমতাসীন আয়ামী লীগ। কিন্তু কোনো বাধাই কাজে আসেনি। মানুষ আগেরদিন রাতে ও পরের দিন সকালে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছে। সকাল ১০টার মধ্যেই বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে পলোগ্রাউন্ড ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিভাগীয় সমাবেশে দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগদান করতে আসার পথে হামলার শিকার হয়েছেন। নেতাকর্মীরা যাতে সমাবেশে যোগদান না করে সেজন্য ভয় দেখাতে, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে মঙ্গলবার রাতে তাদের বাসাবাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তিনি বলেন, যত বাধাই আসুক না কেন বিএনপি নেতাকর্মীদের থামানো যাবে না, বরং চলমান আন্দোলন আরও গতিশীল হবে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ইসি গঠনের পর নির্বাচন করতে হবে : আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোদিন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধমে জনগণের সরকার গঠিত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী দিয়েও গাইবান্ধার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। দুপুরেই নির্বাচন বন্ধ দিয়ে আবারো প্রমাণ হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে আয়োজিত বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে কেউ ভোট দিতে পারেনি। আবার প্রমাণিত হয়েছে গাইবান্ধার উপনির্বাচন। বলেছিল নতুন নির্বাচন কমিশন দিয়েছি এই নির্বাচন কমিশনের ধনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা আগেই বলেছিলাম সরকার পরিবর্তন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ১৩৮০টি সিসিটিভি লাগিয়ে, পুলিশ, র্যাব এমনকি সেনাবাহিনী দিয়েও সেই নির্বাচন হয়নি। দুপুরেই সে নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে চোরের দল আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, কথাটি আমার নয়, দুর্ভিক্ষের সময় ওদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানই বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আবার তারই কন্যা দুর্ভিক্ষের কথাই বলছেন। চুরি আর সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের মুদ্রাগত ও প্রকৃতিগত দোষ। উন্নয়ন ও কুইক রেন্টালের মানে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করছে। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসে, হুংকার দেয়। তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, হুংকার দিয়ে আর লাভ হবে না। সাধারণ মানুষ এখন সচেতন।
ফখরুল বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে সংবাদপত্রে স্বাধীনতা খর্ব করেছে। ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলে, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীন। ১০ টাকায় চাল, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে কিছুই করতে পারে নাই। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করায় মানুষ সঠিক বিচার পায় না। বিএনপি’র পাঁচজন বীরসেনা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের রক্তদানকে বৃথা যেতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য সারাজীবন যিনি চেষ্টা চালিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন, তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেই দেশনেত্রীর জন্য ময়মনসিংহের বন্ধুরা মে একটি চেয়ার খালি রেখেছেন। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মির্জা ফখরুল। সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ দেখিয়েছে, এখন ময়মনসিংহের মানুষ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন করে। এদেশের মানুষ এখন জেগে উঠছে, জেগে উঠবে। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সবার সমবেত প্রচেষ্টায় এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব। এই হোক আমাদের আজকের শপথ। তিনি বলেন, আজকে আমি যখন ময়মনসিংহে রওয়ানা দিলাম। গাজীপুর পার হওয়ার পর মনে হলো হরতাল চলছে নাকি কারফিউ চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, ট্রাক নেই। কিছু ছোট ছোট ট্রাকে আমাদের কিছু নেতাকর্মীরা আসছে। এরপরে শুনলাম মাঝখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নাকি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। তারপর যখন কাছে পৌঁছলাম, দেখলাম সোনার ছেলেরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের ছেলেরা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আজকের সভা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশকে আবার সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। আজকের এই সমাবেশে দেখছেন চেয়ারটা খালি আছে। এটা কার জন্য? দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি এখন কারাবন্দী। তিনি আমাদের দলের প্রধান। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে এখন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা এই চেয়ারটা খালি রেখেছি আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলনে।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারের স ালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ফজলু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কাউসার কামাল, বিএনপির সহ-সাংঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন ও শরীফুল আলম, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি অফরোজা আব্বাস, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা: মাহবুবুর রহমান লিটন, শেরপুর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক রুবেল, যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান মাহমুদ টুকু, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা: আনোয়ারুল হক, জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল কবীর তালুকদার, ময়মনসিংহ উত্তর জেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালাম, কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক ফখরুদ্দিন বাচ্চু, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহীন, যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না, স্বেচচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল সালেহীন জুয়েল প্রমুখ। ময়মনসিংহের গণসমাবেশ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করার পরপরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মে আসেন। মে র মাঝখানে একটি আসন খালি রাখা হয় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিএনপি এই বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করে। সকাল থেকে ধানের শীষ, জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও নেতাকর্মীদের ছবি সংবলিত ব্যানার হাতে নিয়ে খ- খ- মিছিল সহকারে সভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠ।
এদিকে রেলস্টেশনে সমাবেশ ফেরত বিএনপি কর্মীদের সাথে আ’লীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তিনজন আহত হয়েছে। গণসমাবেশ থেকে ফেরত বিএনপি নেতাকর্মীরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ট্রেন ধরতে এলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। বিকেল ৫টার দিকে বিএনপির সমাবেশ শেষ হলে গফরগাঁওগামী কয়েক শ’ নেতাকর্মী বাঘমারা হয়ে রেলস্টেশনের উদ্দেশে আসতে থাকে। স্টেশনে প্রবেশের সময় রেলস্টেশনে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে উভর পক্ষের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ বিকেল ৩টায় রেলওয়ে স্টেশন কৃষ্ণচুড়া চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য জমায়েত হয়। এতে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, বিএনপির একদল কর্মী হঠাৎ আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রতিহত করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুম ও দুইজন পুলিশ আহত হয়।
অপরদিকে, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর বিএনপির জেলা ও উপজেলা নেতা-কর্মীদের হামলা করার সাহস নেই। আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রেলওয়ে স্টেশনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করে।