গোপালগঞ্জে বিগত ৫ বছরে ডিমের উৎপাদন ২ কোটি ২ লাখ পিস বেড়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জের খামারীরা ডিম উৎপাদন প্রতি বছর বৃদ্ধি করছেন। এখানে লেয়ার মুরগী পালনের প্রতিকূল পরিবেশ রয়েছে। তাই খামারীর সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোপালগঞ্জের খামারে উৎপাদিত ডিম দিয়ে জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জে ১৫ কোটি ১০ লাখ পিস ডিম উৎপাদিত হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ পিস ডিমের উৎপাদন পাওয়া যায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ১৭ লাখ পিসে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ পিস ডিমের উৎপাদন হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৭ কোটি ১২ লাখ পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এ জেলার ৫ উপজেলার ডিমের উৎপাদন ২ কোটি ২ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জেলায় ৩৩৮টি লেয়ার মুরগীর খামার রয়েছে। খামারীরা আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে লেয়ার মুরগীর খামার করে ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আসছে। প্রতি বছর খামার যেমন বাড়ছে, সেই সাথে ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও বেধাবী জাতি গঠন ও পুষ্টি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা ,একই সঙ্গে ভোক্তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডিম আন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন একটি ডিম খেলে সারাদিন পুষ্টি পাওয়া যায়। এটি বাস্তবায়নে আমরা প্রচার প্রচারণার চালিয়ে যাচ্ছি। এখন দেশে বছরে ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬৪ লাখ পিস ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিটি মানুষ মাথাপিছু বছরে ১৩৬ টি ডিম খেতে পারছেন। এতে দেশ ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জণ করেছে। পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে একজন মানুষকে বছরে ১০৪টি ডিম খেতে হবে। এর বেশি হলেও ক্ষতি নেই বলে তারা মত দিয়েছেন। সরকার ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে জনপ্রতি দুধ, মাংস ও ডিম খাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ২৭০ মিলি, ১৫০ গ্রাম ও ১৬৫টি নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তাবায়নে গোপালগঞ্জে দুধ, সাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এটি আমরা এখন বাস্তাবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
গোপালগঞ্জ শহরের মাহিকদহ এলাকার খামারী ইয়াহিয়া বিশ্বাস বলেন,আমার খামার থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার পিস ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ খামার গড়ে তুলেছি। লেয়ার মুরগীর খামার করে আমি লাভবান হয়েছি। গোপালগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সহযোগিতা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করছে।
ওই খামারী আরো বলেন, এখন পোল্ট্রিফিড ও বাচ্চার দাম বেশি। অতিরিক্ত দামে খাদ্য ও বাচ্চা কিনে খামার করে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে আসবে। সরকার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেই ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পারব। দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে আমরা ভ’মিকা রাখতে পারব।
পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ এস.এম আউয়াল হক বলেন,গোপালগঞ্জ কৃষি নির্ভর এলাকা। এখানে পোল্ট্রি খামার সম্প্রসারণ করে ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। পরিকল্পিতভাবে এখানে খামার গড়ে তুলতে হবে। এসব খামারে লেয়ার, ব্রয়লার, কক ও সোনালী জাতের মুরগীর খামার করে খামারী লাভবান হতে পারবেন। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এখানে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে এ অঞ্চলে পোল্ট্রি নির্ভর শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। এতিমধ্যে এখানে কাজী ফার্ম বড় আকারে বাচ্চা উৎপাদন করছে। এছাড়া রুমি ফিড খাদ্য তৈরি করছে। এখানে পোল্ট্রি শিল্পের বাচ্চার হ্যাচারী, খাদ্য তৈরি ফ্যাক্টরী, পানিরপাত্র, খাবারপাত্র, ব্রুডার, পোল্ট্রির খাঁচাসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে গোপালগঞ্জের মানুষ কর্মসংস্থারে বড় সুযোগ পাবে। সেই সাথে এ জেলায় ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সরকারের এসডিজি বাস্তবায়িত হবে।