নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণের লাগালে আসছেই না।সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গেছে মোটা চাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম। অন্যদিকে শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। কমেনি ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দামও। ফলে বাজারে নেই কোনো স্বস্তির খবর। গতকাল শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রামপুরা, তালতলা ও মালিবাগ বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারের চালের দোকান ঘুরে জানা যায়, মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধিতে নি¤œআয়ের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এক সপ্তাহ আগেও খুচরায় যে চালের দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকার মধ্যে, সেই চাল কিনতে আজ গুনতে হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ দোকানে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল নেই। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা পাইজাম, যা প্রতিকেজি ৫৬-৫৮ টাকা।
রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জালাল হোসেন বলেন, মৌসুম শেষ বলে কমদামের স্বর্ণা চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যে দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পাইজাম এখন মোটা চাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইজামের দাম স্বর্ণা থেকে প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা বেশি। ওই বাজারের চা বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, ১০ কেজি চাল কিনতে গেলে একদিনের রোজগারের টাকা পুরোপুরি শেষ। প্রতি সপ্তাহে একদিনের রোজগারের টাকা চালের পেছনেই চলে যায়। ফলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে, বাজারে নতুন করে বেড়েছে চিনির দাম। এক কেজি খোলা চিনি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ৯০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর প্যাকেটজাত চিনি কিনতে গুনতে হচ্ছে কোম্পানিভেদে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা।
যদিও সরকার নির্ধারিত চিনির দাম এর থেকে অনেক কম। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৮৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু রিফাইনার্সরা চলতি মাসের শুরুতেই প্রতিকেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ট্যারিফ কমিশনে। বাস্তবে সেটাও মানা হচ্ছে না, বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে।
মালিবাগ বাজারের বিক্রমপুর স্টোরের হামিদুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো চিনির দাম বাড়াবে হয়তো, সেজন্য সরবরাহ একবারে কমিয়ে দিয়েছে। পাইকারি বাজারে চাহিদা দিলেও আগের দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ৪৫-৫৫ টাকা ছিল। এখন বাছাই করা এক কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী সামিউল বলেন, মৌসুমের শেষ, এ জন্য পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই ১-২ টাকা করে বাড়ছে। প্রতিবছর এ সময় পেঁয়াজের দাম আরও চড়া থাকে। এ বছর সেই তুলনায় দাম অনেক কম।
ফের বাড়ল মুরগি-ডিমের দাম: বাজারে প্রায় সকল পণ্যের দামই চড়া। নি¤œ আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত সকলের নাভিশ্বাস অবস্থা। এরই মধ্যে বেড়েছে মুরগি, ডিমের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রতি ছিল ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। আর লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। দাম বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের। লাল ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আগের সপ্তাহে লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ থেকে ২২০ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। সবজির বাজারে দেখা যায়, আকার ভেদে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, সিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা কেজি, চাল কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৫০, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৭০, কচুর লতি ৮০, কাঁচা পেঁপে ৪০, বরবটি ৮০, ধুনধুল ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কাচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কাচা কলার হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।