‘সাউ পেরিলা’ উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি-সমৃদ্ধ নতুন এক তৈলজাত নতুন ফসলের নাম। জেলার গাংনীতে পরীক্ষামূলক আবাদ হচ্ছে এই কোরিয়ান ‘সাউ পেরিলা’র। এই ফসল থেকে লিনোলিনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ তেল আহরণ ছাড়াও প্রাপ্ত খৈল গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার ও জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
পেরিলা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গাংনীতে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। বীজে ২৫ শতাংশের ওপরে আমিষ থাকায় তেল আহরণের পরে তা থেকে প্রাপ্ত খৈল গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারসহ জৈব সার হিসেবেও ব্যাবহার করা যাবে। ১০০-১০৫ দিনের এই ফসল থেকে হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ টন পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করা যাবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমাণ কমে যাবে, তেমনি সাউ পেরিলা-১ দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন।
২০২০ ফসলটি পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অবমুক্ত করে। গাংনী উপজেলার তেরাইল ব্লকে প্রথম চাষি নজরুল ইসলাম প্রথম এই চাষ করতে পেরে গর্বিত বলে মত প্রকাশ করেন। এই পেরিলা চাষ লাভজনক হওয়াতে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে এই চাষটি সম্প্রাসারিত হয়েছে।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের পেরিলা-চাষি লিমন হোসেন বলেন- এ ফসলটির আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস স্থানীয় কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ও বীজ সরবরাহ করে। প্রতি বিঘা জমিতে জমি প্রস্তুত থেকে ফসল মাড়াই পর্যন্ত খরচ হবে মাত্র ১০ হাজার টাকা। আর এ থেকে পাওয়া সম্ভব ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তা ছাড়া ১০০ দিনে এ ফসল কাটা-মাড়াই সম্ভব। পেরিলার গুণগত মান ও পতিত জমিতে চাষ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে দো ফসলি ও তিন ফসলি ছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে এর চাষ সম্ভব। তাই অনেকেই আসছেন পেরিলার চাষের পরামর্শ নিতে।
উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মো. শাহীন রেজা জুয়েল জানান- সাথী ফসল হিসেবে চাষ করতে পারায় ১০০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা। গাছ, পাতা, সবকিছুই কাজে লাগবে মানুষের। আশা করি, ভবিষ্যতে ব্যাপক আকারে চাষ হবে এ অ লে। পেরিলা চাষ সম্পর্কে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কোরিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি লিটার ‘পেরিলা তেল’ বাংলাদেশের বাজারে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি পুষ্টিগুণের কারণে ধনী শ্রেণির মধ্যে এই তেলের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন- পেরিলা চাষাবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক কম মূল্যে পেরিলা তেল বাজারজাত করা সম্ভব হবে। মাটির গুণগত মান, আবহাওয়াও অনুকূলে আছে। আশা করি, পেরিলা মেহেরপুরের কৃষিকে সমৃদ্ধ করবে এবং কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। তিনি আরও বলেছেন- পেরিলা- বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমাণ কমে যাবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন। তিনি জানান- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহ করেন এই জাত। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় বীজ বোর্ড সাউথ কোরিয়ান ভ্যারাইটির পেরিলা-১ নামে জাতটির নিবন্ধন দেয়। জাতটি দেশের আবহাওয়ার উপযোগী করে সাধারণভাবে সরিষা ভাঙানোর মতো করেই এই তেল পাওয়া যায়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ২০০৭ সালে থেকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহকৃত জাতটি নিয়ে দেশে গবেষণা শুরু করেন। এই ফসল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফসলটি থেকে আমরা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ তেল আহরণ করতে পারব। যা সাধারণ তেলের চেয়ে বেশি উপকারি এবং বাজার মূল্যও বেশি। কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করে সংরক্ষণ ও পরবর্তীতে চাষ করতে পারবেন। এছাড়াও তেল আহরণও করতে পারবেন স্বাভাবিকভাবে। এতে কৃষকরা বেশি উপকৃত হবেন।