প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাত ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় ৭-৮ বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল রানা হাওলাদার। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তার। গত মঙ্গলবার ২৫শে অক্টোবর রাত ১০টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাতিরঝিল থানার একটি টিম পশ্চিম রামপুরার উমর আলী লেন এলাকা থেকে রানা হাওলাদারকে (২৬) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কৃত্রিম হাতের ফাঁকা অংশে রাখা নীল রংয়ের একটি ছোট ব্যাগ থেকে ১৫৫ পিস সাদা রংয়ের ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গতকাল বুধবার ২৬শে অক্টোবর সকালে তেজগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগ এর উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ. এম আজিমুল হক। তিনি বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রানা হাওলাদারের বাম হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ কেটে ফেলেন চিকিৎসক। এরপর থেকে গ্রেপ্তারকৃত রানা হাওলাদারের বাম হাতের কনুইয়ের নিচে সংযুক্ত প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাতের ভিতরে
ফাঁকা জায়গায় বিশেষ কায়দায় ইয়াবা বহন করে মাদক ব্যবসা করে আসছিলো। তাকে গ্রেপ্তারের পরআজ সকালে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে।
ডিসি আজিমুল বলেন, রানা হাওলাদার পেশায় অটো রিকশাচালক। অটো রিকশা চালানোর আড়ালে তার মূল পেশা ইয়াবা ব্যবসা। অটো রিকশা চালিয়ে সে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যাত্রী আনা নেওয়ার পাশাপাশি ইয়াবা সাপ্লাই করতো। বাম হাতে প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাত সংযুক্ত থাকায় তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ভেবে পুলিশ সন্দেহ করতো না। এই সুযোগকে সে কাজে লাগিয়ে গত প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছিলো। হাত না থাকায় উপরন্তু সে সবার সহানুভূতি পেয়েছে।
রানা বেশ কিছুদিন থেকে মিরপুর এলাকায় বসবাস শুরু করে। গত সাত দিন আগে সে বিয়ে করেছে। এটা তার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। গতকাল সে মিরপুর থেকে বাসযোগে নতুন বউকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। রামপুরা এলাকায় এসে বাস থেকে নেমে বউকে বসতে বলে ইয়াবা ডেলিভারি দিতে গিয়ে হাতিরঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তাররকৃত রানা কোন ব্যক্তিকে ইয়াবা দিতে গিয়েছিল এবং কোথা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের এই ডিসি আরও বলেন, সিডিএমএস অনুসন্ধানে রানা হাওলাদারের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের সখিপুর থানায় ২টি মাদক মামলাসহ মোট ৩টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। রানা হাওলাদারের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। গত প্রায় এক দশক ধরে সে মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে
স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর গত চার বছর ধরে বাম হাতের কনুইয়ের নিচে প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাতকেই ইয়াবা বহনের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেছে।