রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

সারা দেশে ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে পাঠাগার করা হবে: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

শিগগিরই ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে পাঠাগার তৈরি করা হবে। আর পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব বিদ্যালয়ে পাঠাগার করা হবে। এ ছাড়া সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে। গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠাগার তৈরির একটি প্রকল্প আমাদের ৩০০টি বিদ্যালয়ে ছিল। সেটি আমরা ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে চাই। এর জন্য অনেক বড় বিনিয়োগ লাগছে, কিন্তু আমরা সেটি করবো। ইতিমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগেছিল। আশা করি শিগগিরই কাজ শুরু হবে। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ থাকবে না। তারপরও এ বছর যা বাস্তবায়িত হবে, আগামী বছর তা আরও পরিশীলিতভাবে করতে পারবো বলে আশা করি।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে পাঠাগার চালু করার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছি। আমাদের অনেক বেশি মনিটর করতে হবে। এ জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল কানেক্টে আনার চেষ্টা করছি, যাতে আমরা এক জায়গায় বসে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়মিত দেখতে পাই। ডিজিটাল হয়ে গেলে আমরা পাঠাগারের কার্যক্রমও দেখতে পাবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাঠাগারের একটা ঘর আছে, একটি আলমারি আছে, এগুলোতে তালা মারা থাকে, ভেতরে ধুলাবালু পড়ে থাকে, তেমন যেনো না হয়। পাঠাগারের কাজ ঠিকমতো হওয়া প্রয়োজন। লাইব্রেরিয়ান পদটিকে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সেটি যেহেতু করা হয়েছে, তাহলে পাঠাগারের উন্নয়ন অবশ্যই হবে।’ প্রকাশকদের পক্ষে পুরস্কার হিসেবে বই দেওয়ার প্রস্তাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পুরস্কারের নির্দেশনা আগেই দেওয়া হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে যে কয়েক জায়গায় গিয়েছি, প্লেট-বাসন, এটা-ওটা দিয়েছে। এর বদলে এখন বই দেওয়ার কাজটি শুরু হয়েছে। এটি হয়তো আরও ব্যাপকভাবে হতে হবে। আমরা যত বেশি প্রচার করতে পারবো।’ দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুধু অনুরোধ নয়, নির্দেশনা দিচ্ছি। আরও বেশি মনিটর করবো। আপনারা (প্রকাশকরা) আরও বেশি মনে করিয়ে দিতে থাকবেন। তাহলে আরও বেশি মনিটার করার সুযোগ তৈরি হবে।’
শুল্কমুক্ত কাগজ চান প্রকাশকরা, শিক্ষামন্ত্রী চান ১ জানুয়ারির মধ্যে নতুন বই: কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিওয়ার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই চেয়েছেন প্রকাশকদের কাছে। শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় সমিতির পক্ষে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে আসে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব সংকটের মুখে। তাড়াতাড়ি সুসংবাদও পাবো না। টিকে থাকতে হবে। কদিন আগে কাগজ বিক্রেতাদের সঙ্গে বসেছি। তারা কথা দিয়েছেন ১ জানুয়ারিতে বই দিতে পারবো। এরপরও কথার খেলাপ হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সন্তানদের শিক্ষার সঙ্গে আপসের সুযোগ নেই। বই আমার লাগবেই এবং ১ তারিখেই লাগবে।’ প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর মূদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিক ও পেপারমিল মালিককের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, দেশীয় পেপার মিল মালিকরা দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে কাগজ সরবরাহ করবেন। দেশীয় পেপার মিল মালিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে এবং চাহিদা অনুযায়ী কাগজ সরবরাহ না করলে মূদ্রণ শিল্প মালিকদের কাগজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। আগামী বছর ১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পেপার মিল মালিক, মুদ্রণ শিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে স্পেসিফিকেশন ঠিক করার সময় ব্রাইটনেস বিষয়ে পেপার মিল মালিকদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় শনিবার শিক্ষামন্ত্রী মিল মালিকরা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাগজ না দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কায়সার-ই-আলম, শ্যামল পাল, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন। প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল। বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির পরিচালক ও ৬৪ জেলা ও উপজেলার পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম, বাপুসের উপদেষ্টা ওসমান গণি, পুস্তক বাধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক তাদের বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনও ৫০ ভাগ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি।
প্রশাসকদের বিভিন্ন প্রস্তাবনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এনসিটিবি’র (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পুস্তক প্রকাশনা সংক্রান্ত সেখানে আপনাদের প্রতিনিধিত্বের কথা বলেছেন সেটি অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। আমি তো বললাম আমি আপনাদের সব সুপারিশের সঙ্গে একমত। গণি ভাই বলেছেন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মন্ত্রীর কথায় খুশি হয়ে ফিরে আসি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আশা করি সেই মন্ত্রী আমি না। কিন্তু আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো তখন অখুশি করার কথা তো বলতে চাই না। আপনারা খুশি হন তেমন কথাই বলতে চাই। তবে আমি নিজেকে যতটুকু জানি সেটুকু বলতে পারি আমি সত্যটুকু বলবার চেষ্টা করি। তাতে আপনি যদি অখুশি হন তাতে আমার কিছু করার নেই। আমি সত্যটা আমি বলবো। আর আপনাকে খুশি করবার জন্য অর্থাৎ আপনার শিল্পটা ভালো হলেই তো আপনি খুশি হবেন! সেই ভালোটা করবার জন্য আমার যা সাধ্যে আছে, আমি তার সবটুকু করতে রাজি আছি এবং করবো। কাগজের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করার কথা বলেছেন এটা সত্যি, কিন্তু আমার মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত নয়। যদি সমস্যা হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি বেশি ভুক্তভোগী হবো আমরা, কারণ সবচেয়ে বড় গ্রাহক আমার মন্ত্রণালয়।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। পাঠাগার সারাদেশে চালু করার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছি। অনেক বেশি মনিটর আমাদের করতে হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালি কানেক্ট করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা এক জায়গায় বসে যেকোনও প্রতিষ্ঠানকে (প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম) নিয়মিত দেখতে পাই। ডিজিটাল হলে আমি পাঠাগারও দেখতে পাবো। পাঠাগার নামে কোথাও একটি আলমারি আছে, কোথাও একটা ঘর আছে। এগুলোতে তালা মারা থাকে, ভেতরে ধুলাবালি পড়ে আছে তেমন যেনও না হয়। পাঠাগারের কাজটি ঠিকমতো হওয়া প্রয়োজন। লাইব্রেরিয়ান পদটিকে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সেটি যখন করা হয়েছে তার পাশাপাশি পাঠাগারেও উন্নয়ন অবশ্যই হাত হাত ধরে হবে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময় প্রকাশনা শিল্প খারাপ থাকবে তা হতে পারে না।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com