বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অস্টিওপোরেসিস: এক ‘নীরব ঘাতক’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

দেশে মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশই অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত এবং এই রোগে আক্রান্তের বেশিরভাগই হচ্ছেন নারী। বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি এই তথ্য জানিয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্তদের অনেকেই তাদের রোগ সম্পর্কে জানেন না এবং আক্রান্তদের সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এমনকি ছয় মাসেই মৃত্যু ঘটতে পারে। সোসাইটির গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যদিও তাদের অনেকের জানাই নেই যে তারা হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক একেএম সালেক বলছেন ৫০ বছর বয়সী যারা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের প্রতি দশজনের নয়জনই নারী। তবে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে সাধারণত এ অনুপাত হয় ৬:৪ বা ৭:৩। অনেকদিন ধরে হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত রোমেনা আখতার বলছেন দীর্ঘদিন পিঠ ব্যথায় ভোগার পর পরীক্ষায় নিরীক্ষায় ধরা পড়ে যে তিনি হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত। ‘অনেক দিন ধরেই পিঠে ব্যথা। ব্যথা উঠলে কাজ কর্ম করতে পারতাম না। ব্যথার ওষুধ খেতাম। কিছুক্ষণ ভালো, আবার খারাপ। পরে ডাক্তার টেস্ট করে বললো হাড় ক্ষয়। ওষুধ খাচ্ছি। আর ডাক্তারের পরামর্শ মতো রোদে যাই, একটু পরিশ্রম করার চেষ্টা করি,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের ধারণা আগামী পাঁচ বছরে নন-কমিউনিকেবল যেসব রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় তার মধ্যে শীর্ষ পাঁচে এই হাড় ক্ষয় রোগ উঠে আসবে। ‘হার্ট, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের সমস্যার পর হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হবে বলে আমরা ধারণা করছি,’ বলছিলেন তিনি।
হাড় ক্ষয় রোগ কী?
মানুষের শরীরের হাড়ের একটি গঠন প্রক্রিয়া আছে। জন্মের পর থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হাড় নানাভাবে পরিপক্ব হতে থাকে। এরপর আবার ঘনত্ব কমে হাড় পাতলা হতে শুরু করে। অধ্যাপক একেএম সালেক বলছেন, হাড়ের ঘনত্ব যখন কমে যায় তখনই সেটা রোগ আর এর নামই হাড় ক্ষয় রোগ। রোগটিতে আক্রান্ত হলে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় ছিদ্রযুক্ত, দুর্বল এমনকি ভেঙ্গেও যেতে পারে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা না নিলে একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম যেমন- নামাজ, গোসল, টয়লেটে এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মূলত হাড়ের স্ক্যান করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে এর ঘনত্ব কতটা কমেছে এবং সে অনুযায়ী তারা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
হাড় ক্ষয় কেন হয়? কখন হয়?
সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বয়স পর স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষের হাড় ক্ষয় হয়ে থাকে। মানুষের শরীরের এ ধরণের পরিবর্তনের সাথে হরমোনের প্রভাব থাকে। আর নারীদের শরীর থেকে হরমোন খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে বা মেনোপোজের পর এটি বেশি হয়। আর হরমোন কমে গেলে শরীর থেকে দ্রুত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি বের হয়ে যায়। ‘ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি কমে গেলে তখন শরীর আর হাড় গঠন করতে পারে না। ফলে শুরু হয় হাড় ক্ষয়,’ বলছিলেন মিস্টার সালেক। এছাড়া যারা ক্যান্সার, রক্তরোগ, অপুষ্টি জনিত রোগ, কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। এর বাইরে নানা রোগের চিকিৎসার জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড সেবন করে তাদের হাড়েরও ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় ক্ষয় রোগ হতে পারে। অধ্যাপক একেএম সালেক বলছেন, ‘হাড় ক্ষয় একটি নীরব ঘাতক। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছেন।’
রোগটির লক্ষণ কী? হলে কেমন প্রতিক্রিয়া হয় শরীরে?
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত মানুষ পিঠের ব্যথা নিয়েই তাদের কাছে আসেন। এছাড়া কোমর ব্যথাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। তারা এটিকে বলছেন ‘নীরব ঘাতক’। অধ্যাপক সালেক বলছেন, এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত যতটুকু আঘাতে একজন ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গার কথা তার মাত্র এক পঞ্চমাংশ আঘাতেই হাড় ভেঙ্গে যায়। আর মেরুদ-ের হাড়ের ক্ষয় হলে মানুষ একটা পর্যায়ে গিয়ে কুঁজো হয়ে যায়। মেরুদ- ছাড়াও কোমর, হাতের কব্জি, পায়ের কুচকির হাড়ের ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। ‘আসলে যেসব হাড় মানুষের শরীরের ওজন বহন করে সেগুলোই ক্ষয় হয় বা ভেঙ্গে যায় এ রোগটির কারণে,’ বলছিলেন অধ্যাপক সালেক।
চিকিৎসা বা প্রতিকার কী?
অধ্যাপক একেএম সালেক বলছেন, চিকিৎসার চেয়ে রোগটি প্রতিরোধ করাই উত্তম। ‘এজন্য সুষম খাবার বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। আর শারীরিক পরিশ্রম ও রোদে যাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।’ তার পরামর্শ হলো পুডিং, দুধ, দই, সবুজ শাক-সবজি ও তাজা ফলমূল যেমন খেতে হবে তেমনি বাচ্চাদের বাইরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘সুষম খাবার না পেলে আর খেলাধুলা না করলে বাচ্চাদের হাড় গঠন ঠিক মতো হয় না যা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’ চিকিৎসকরা সাধারণত ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার কথা বলেন। এছাড়া সামুদ্রিক মাছ খাওয়া, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা এবং ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ থাকলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর সতর্কতা হিসেবে বাসা বাড়িতে বাথরুমের পিচ্ছিল ভাব দূর করা, রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখা এবং অন্ধকারে চলাফেরা না করার কথাও বলেন। পাশাপাশি এ রোগে যারা আক্রান্ত হন তাদের কোনোভাবেই অতিরিক্ত ওজন বহন না করার কথাও বলা হয়। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com