গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কেউ বলে কুঠিবাড়ী কেউ বলেন নীলকুঠি। কয়েকশো বছর ধরে টিকে আছে এই বাড়ীটি। দুই নামেই উপজেলা জুরে রয়েছে এর পরিচিতি। সময়টা ব্রিটিশ শাসনামল তখন ব্রিটিশরা এ দেশ শাসন করতো এবং এই দেশ থেকে নীল চাষ করে ব্রিটেনে নিয়ে যেত। এই এলাকার কৃষকদের বাধ্য করা হতো নীল চাষ করার জন্য। ব্রিটিশদের শোষণের চিহ্ন হয়ে আজও দাঁরিয়ে রয়েছে নীলকুঠি বা কুঠিবাড়ী। তখনকার সময় এই এলাকাটি ছিল ভারতবর্ষের অংশ। ১৮৫৮ সালে ভারতবর্ষে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজত্ব শেষ হয়। তাদের শাসনামলের সময় নির্মিত হয়েছে এই কুঠিবাড়ী। কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঐতিহাসিক রানীগঞ্জ বাজার ও রানীগঞ্জ হাই স্কুল এর উত্তর পাশের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই কুঠিবাড়ী, নীল কুঠির। রানীগঞ্জ হাই স্কুলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক আ. ওহাব জানান, এখানে এখনো নীল তৈরি করার একটি চুলা কিছু অংশ রয়েছে। এই চুলায় জাল দিয়ে নীল তৈরি করা হতো। পরে ব্রিটেনে এই শীতলক্ষ্যার নদীপথে পাঠানো হতো। এই নীলকুঠির থেকে নরসিংদীর লাখপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জ নদীর পূর্ব পাশের সনমানিয়া এলাকা জুড়ে তখনকার সময় নীল চাষ হতো। এই নীল কুঠি ছিল অত্র এলাকার কেন্দ্রস্থল। মনিসিং নামে এক হিন্দু লোক থাকতো, তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো কার্যক্রম তিনি ইন্ডিয়ান ছিলেন। তখনকার সময়ে পুরো এলাকাটি ছিল ভারত বর্ষ। নীল কুঠিরটি লোহা, কাঠ ও পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যার বয়স দুইশ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি। তখনকার সময়ে একটি পালক ও চৌকি রয়েছে যা এখনো ব্যবহার করা যায়। কিছু অংশ ছাড়া বাকি সব অংশই অক্ষত রয়েছে। দোতলা বাড়ীটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তখনকার সময় যা এখনো ওই রকমই আছে। এই বাড়ীটির চারপাশ জুড়ে ৪ বিগার উপরে জমি রয়েছে সেই জমিতে রয়েছে লিচু বাগান। কিছু লিচু গাছ শত বছরের উপরে বয়স হয়েছে সেই লিচু গাছগুলি এখনো ফল দেয়। রানীগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আলী মনসুর জানান, এই কুঠিবাড়ীটি একসময় এই স্কুলের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। দূরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই কুঠিবাড়ীতে থাকতো। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলে জিনিসপত্র লোকজন এই কুটি বাড়ীতে থাকে। আধুনিক ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যুৎ পানি ও রান্নাঘর সহ সব ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কিছু অংশও সংস্কার করা জরুরি। পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি হওয়াতে ইট সিমেন্ট দিয়ে সংস্কার করা যাচ্ছে না। তা সংস্কার করতে গেলে পোড়া মাটির কাজ যারা পারে তাদের দিয়ে করতে হবে। সুরকি ব্যবহার করে এই বাড়ীটি তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের কাজ জানা তাদের দিয়ে মেরামতের কাজ করা হলে পূর্বের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা যাবে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান জানান, বহু বছর আগে নির্মিত এই কুঠিবাড়ীর কথা আমি শুনেছি। আমি পরিদর্শনের যাব এবং কুঠিবাড়ীটি সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।